বিএনপি নেতাদের মতে, আন্দোলন করে খালেদাকে মুক্ত করার সামর্থ্য নেই দলটির
2019.02.07
ঢাকা
আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আদায় করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য বিএনপির নেই বলে স্বীকার করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এদিকে বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তিরও কোনো সম্ভাবনা নেই।
গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারারুদ্ধ হন বিএনপি প্রধান ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর আরেক দুর্নীতি মামলায় সাজা পেয়ে বর্তমানে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত তিনি।
তাঁর কারাবাসের এক বছরের মাথায় বিএনপি নেতারা বলছেন, আপাতত খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে কোনো কর্মসূচি নিচ্ছেন না তাঁরা।
“খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা তাঁর মুক্তির জন্য কোনো রাজপথের কর্মসূচি আপাতত নিচ্ছি না,” বেনারকে বলেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, “সত্য কথা বলতে গেলে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোনো শক্তি অথবা সামর্থ্য নেই বিএনপির।”
নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবির পর খালেদার মুক্তির জন্য ঐক্যফ্রন্ট কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি।
তবে খালেদার মুক্তির বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে বেনারকে জানান গণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা সুব্রত চৌধুরী।
তিনি বেনারকে বলেন, “আমাদের অন্যতম দাবি হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।”
তাঁর মতে, “বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সরকারের ইশারায় রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে।”
“আমরা তাঁর মুক্তির দাবিতে আপাতত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করিনি,” বলে মন্তব্য করলেও সুব্রত চৌধুরী জানান, “আমরা ভবিষ্যতে সভা করে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেব।”
তবে রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বেনারকে বলেন, “উনি দুর্নীতি করেছেন। সাজা পেয়েছেন। সাজা কি সরকার দিয়েছে? আদালত স্বাধীন; তারা তাঁকে সাজা দিয়েছে। মামলা করেছে তত্বাবধায়ক সরকার। আমরা করিনি।”
খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। এতে বক্তব্য রাখবেন দলের সিনিয়র নেতারা। দেশের বাইরে থাকায় বক্তব্য রাখতে পারছেন না মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে জেলখানায় খালেদা জিয়ার “স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব ভালো নয়,” বলে বেনারকে জানান মাহবুবুর রহমান। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, “উনি জেলখানায় পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তাঁর কোনো সমস্যা নেই।”
খালেদা-তারেকের দিন শেষ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “আমার কাছে মনে হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের রাজনীতির দিন শেষ। কারণ দুই মামলায় ১৭ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। আরও মামলায় তাঁর সাজা হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং, মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় শেষ করতে কত বছর লাগবে সেটি বলা খুব কঠিন।”
তিনি বলেন, “উনি জামিন পাবেন তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।”
ড. নিজাম বলেন, “তাঁর ছেলে তারেক রহমান আমেরিকা-ইউরোপ থেকে শুরু করে সব জায়গায় অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। উনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অবস্থান করছেন দেশের বাইরে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ সারা দেশের সকল বিরোধীরা এককাট্টা: আওয়ামী লীগ জালিয়াতি করে ভোটে জিতেছে। কিন্তু আমরা দেখলাম ভোট হয়ে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ভারত, চীন, রাশিয়া, আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে দিলো।”
“এর অর্থ হলো বিএনপির পক্ষে কোনো আন্তর্জাতিক সমর্থন নেই। যার পক্ষে কেউ নেই তিনি কীভাবে মুক্তি পাবেন?,” যোগ করেন ড. নিজাম।
তিনি বলেন, “এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। আবার আওয়ামী লীগ কেন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে যাবে? তারা যদি রাস্তায় রাজনৈতিক চাপ দিতে না পারে তাহলে তারা দেবে না।”
তাঁর মতে, বিএনপিকে সমর্থনকারীরা ভোট দিতে যায়। কিন্তু রাস্তায় নামে না।
তিনি বলেন, “কেন নামবে? নতুন সরকার এসেছে। তারা আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। রাস্তায় আন্দোলন করে পুলিশি অ্যাকশনের শিকার হতে হবে। আবার পাঁচ বছর পর দল ক্ষমতায় আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, “জনগণ দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে নামবে না। জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে।”
চার মামলার জামিন দরকার
আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পুরানোসহ এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা আছে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান বেনারকে বলেন, “ম্যাডামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৩টি মামলা চলমান। এগুলোর মধ্যে চারটি মামলায় জামিন নিতে হবে।”
তাঁর মতে, জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় মোট ১৭ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।
কুমিল্লায় বাসে আগুন ধরিয়ে আটজন মানুষের মৃত্যু মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এহসানুর রহমান বলেন, “সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহ আগে ঢাকার একটি আদালত বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।”