যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার জঙ্গির ব্যাপারে বাংলাদেশের কিছু করণীয় নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
2019.06.08
ঢাকা

নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত কুইন্স এলাকার বাসিন্দা আশিকুল আলমকে (২২) বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে আমেরিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান শনিবার বেনারকে বলেন, আশিকুলের ব্যাপারে বাংলাদেশের কিছু করণীয় নেই।
আর বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আশিকুল বাংলাদেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্রে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়।
আশিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি টাইমস স্কয়ারে গ্রেনেড নিক্ষেপের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি ওসামা বিন লাদেনের সমর্থক ছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি সিরিয়াল নম্বর মুছে দেয়া আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন। তবে যার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে গিয়েছিলেন তিনি ছিলেন একজন সরকারি গোয়েন্দা সদস্য।
আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে এফবিআই এজেন্ট ও নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট টেররিজম টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা।
২০১৭ সালে আকায়েদ উল্লাহ নামের আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুবক টাইমস স্কয়ারে পাইপ বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে আহত হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হয়।
তবে আশিকুলের বিরুদ্ধে এখনো সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হয়নি।
রাতে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে আশিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। আদালত তাঁর জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিেয়ছে।
আশিকুলের বিরুেদ্ধ অভিযোগে বলা হয়েছে, ছদ্মবেশী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে বৃহস্পতিবার সিরিয়াল নম্বর মুছে ফেলা দুটি গ্লক ১৯ নাইন এমএম সেমি-অটোমেটিক পিস্তল নেওয়ার পর আশিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে অচেনা এক এফবিআই এজেন্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিউ ইয়র্কে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা এবং জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের প্রতি সমর্থন জানান আশিকুল।
বিস্ফোরক ভেস্ট ব্যবহার করে টাইমস স্কয়ারে হামলা চালানোর বিষয়েও ওই এজেন্টের সাথে আলোচনা করেন আশিকুল। ওই আলোচনার পর গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন আশিকুল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “আশিকুল আলমের গ্রেপ্তারের খবর আমরা জেনেছি। কিন্তু এখনো আমরা ওই যুবক সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানি না।”
মন্ত্রী বলেন, “সে আমাদের নাগরিক নয়। সে গ্রিনকার্ডধারী আমেরিকান নাগরিক। সুতরাং তাকে নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।”
তিনি বলেন, “তার বাবা-মা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তার অর্থে এই নয় যে বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিকের খারাপ কাজ অথবা ফৌজদারি অপরাধের দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশকে নিতে হবে।”
আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আমার মনে হয়, সেদেশের আইন অনুযায়ী আশিকুলের বিচার হবে।”
তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ভিসা পেতে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। কোনো বাংলাদেশি অভিবাসী ভিসার জন্য আবেদন করলে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার স্থায়ী ঠিকানা অথবা তার জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক আছে কি না।”
হায়দার আলী বলেন, “কখনো কখনো কোনো অভিবাসন ভিসার আবেদনকারীর কোনো অপরাধী অথবা সন্ত্রাসী অতীত আছে কি না সে সম্পর্কে তারা আমাদের কাছে জানতে চায়। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে থাকি।”
তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকার কর্তৃপক্ষ শুধু আমাদের দেয়া তথ্য বিবেচনায় নেয় না। তারা তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে।”
হায়দার আলী বলেন, “আশিকুলের অপরাধের অতীত থাকলে মার্কিন ভিসা পেত না।”
“আমেরিকায় যদি কেউ জঙ্গিবাদে অথবা উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই,” তিনি যোগ করেন ।
কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিটের উপ-কমিশনার মুহিবুল ইসলাম খান বেনারকে বলেন, “আমরা আশিকুলের গ্রেপ্তার সম্পর্কে খবর পেয়েছি। সে কবে ও কীভাবে আমেরিকা গেছে সেব্যাপারে বিস্তারিত আমরা বের করার চেষ্টা করছি।”
নিউ ইয়র্কের জন জে কলেজ অব ক্রিমিনাল জাস্টিসের ছাত্র আশিকুল ১০ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান বলে এক প্রতিবেদনে জানায় বার্তাসংস্থা এপি।