তিস্তায় নিখোঁজ সীমান্তরক্ষী উদ্ধারে বিজিবি-বিএসএফ যৌথ অভিযান

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.06.27
ঢাকা
তিস্তা নদীতে নিখোঁজ বিজিবি সদস্য সুমন মিয়াকে উদ্ধারের চেষ্টা। তিস্তা নদীতে নিখোঁজ বিজিবি সদস্য সুমন মিয়াকে উদ্ধারের চেষ্টা। ২৭ জুন ২০১৭।
বেনারনিউজ

চোরাচালানীদের ধরতে গিয়ে তিস্তায় নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যকে উদ্ধারে বিজিবি ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ যৌথভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ১৫-বিজিবি কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোরশেদ।

নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের নাম সুমন মিয়া (৩০) বলে তিনি জানান। সুমন ১৫-বিজিবি’র একজন নন-কমিশন্ড ল্যান্স নায়েক।

ঘটনাটি ঘটে গত রোববার দিবাগত রাত দুটার দিকে উত্তর-পশ্চিম লালমনিরহাট জেলাধীন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী দহগ্রাম এলাকার আবুলের চর পয়েন্টে। গতকাল সোমবার রাত নয়টা পর্যন্ত প্রায় ১৯ ঘন্টা পার হলেও তাঁকে উদ্ধার করা যায়নি। তিস্তা নদীর পানি ঘোলা থাকায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ক্যামেরার মাধ্যমেও নিখোঁজ সুমনকে খোঁজা যাচ্ছে না।

নিখোঁজ বিজিবি সদস্য সুমন মিয়া।
নিখোঁজ বিজিবি সদস্য সুমন মিয়া।
নিউজরুম ফটো
“আমরা আশঙ্কা করছি, সুমন হয়ত পানিতে তলিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তবে আমরা আশা ছাড়িনি। আমাদের এবং বিএসএফের স্পীড বোট দিয়ে উদ্ধার কাজ চলছে,” বলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোরশেদ।

তিনি বলেন, “তিস্তা একটি ‘আনপ্রেডিকটেবল’ নদী; এখন এখানে প্রচুর পানি। আমাদের ডুবুরিদের মতে, নদীর তলদেশে স্রোত খুবই প্রবল। আমরা জানি না সে জীবিত আছে কি না।”

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোরশেদ বলেন, সুমন মিয়াসহ চার বিজিবি সদস্য নৌকায় করে কয়েকজন সন্দেহভাজন চোরাকারবারীকে দেখতে পায়। বিজিবি সদস্যরা তাদের থামার সংকেত দিলে নৌকাটি না থেমে রওনা দেয়। সুমন নৌকাটি ধরার জন্য নদীর পাড় থেকে ঝাঁপ দেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

তবে সুমনের সহকর্মীদের ভাষ্য পাওয়া যায়নি। চাকুরীর শর্ত অনুযায়ী তারা সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলতে পারেন না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান টেলিফোনে বেনারকে বলেন, নিখোঁজ সুমনকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি সুমনের দায়িত্ববোধের প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে নিরলসভাবে দেশ সুরক্ষার কাজ করে যাচ্ছে।”

সীমান্ত নদী তিস্তায় বছরের অধিকাংশ সময়ে পানি থাকে না। নদীতে পানি না থাকলে চোরাকারবারীদের সুবিধা হয়। তবে জুন-জুলাই মাসে অতি বৃষ্টির কারণে নদীতে প্রচুর পানি থাকে। এ সময় তারা দেশীয় নৌকা দিয়ে চোরাচালান করে।

স্থানীয়দের মতে, চোরাচালানীরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নদী তিস্তা দিয়ে ভারত থেকে গরু, ইয়াবা ও বিভিন্ন প্রকার মাদক বাংলাদেশে পাচার করে। আবার বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে পাচার করে।

গত ২৪ জুন ১৫-বিজিবি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রায় চার লাখ টাকা মূল্যের গরু আটক করে। এক সংবাদ বিবরণীতে এ কথা জানায় বিজিবি।

গরুসহ নিষিদ্ধ দ্রব্য চোরাচালান করতে গিয়ে ভারতীয় বিএসএফ–এর গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

দহগ্রাম ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশের একটি ছিটমহল ছিল। সেখানে বাংলাদেশ অথবা ভারতীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহজে প্রবেশ করতে পারত না। তাই, চোরাকারবারীরা ওই এলাকাকে তাদের অবৈধ কাজের জন্য ব্যবহার করত।

বছর দুয়েক আগে ছিটমহল সমস্যা সমাধানের পর চোরাচালান কিছুটা কমলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

“দেখেন ভাই, লালমনিরহাট একটা গরিব এলাকা। এখানকার মানুষদের কাজের সুযোগ খুবই কম। তাই অনেকেই এখানে চোরাচালান করে জীবন চালায়। কাজ থাকলে কে চোরাচালান করে মরতে চায়?,” বেনারকে টেলিফোনে বলেন দহগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।