করোনাভাইরাস: সংক্রমণ কমে আসায় খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিথিল বিধিনিষেধ
2022.02.22
ঢাকা

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সরকার। গত ২৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা ওই আদেশের কার্যকারিতা মঙ্গলবার শেষ হলেও সেটি আর বর্ধিত করা হয়নি।
মঙ্গলবারই দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়েছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে গত ২১ জানুয়ারি স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা আদেশের কার্যকারিতা না বাড়ানোর ফলে দেশের সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। দেশের অর্থনীতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ-পূর্ব পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বেনারকে বলেন, বাংলাদেশে সংক্রমণ কমে আসায় মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশিদের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ফলে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি সংখ্যক কর্মী সেদেশে যেতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গত মাসে জারি করা আদেশ অনুযায়ী, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। গণপরিবহনের জন্য দেয়া হয় বিভিন্ন নির্দেশনা।
সংক্রমণ-পূর্ব অবস্থায় যাচ্ছে দেশ
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বেনারকে বলেন, “এবছরের শুরু থেকেই জাতীয়ভাবে সংক্রমণ হার বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং খুব অল্প সময়েই সেটি শতকরা ৩৫ ভাগ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কোনো কোনো জেলায় শতকরা ৭০ ভাগ পর্যন্ত সংক্রমণ ধরা পড়ে।”
তিনি বলেন, “বর্তমান যে প্রবণতা তাতে মনে হচ্ছে, আগামী মাসগুলোতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সে কারণে হয়তো আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আর বহাল রাখা হয়নি। বলা যায়, আমরা মহামারি-পূর্ব অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি।”
“কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর কারণ গতবছরও সংক্রমণ হার শতকরা দুই ভাগের নিচে নেমে আসে। তারপর আবার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়,” বলেন ডা. মোশতাক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি সাপেক্ষে সরকার ১২ বছরের নিচের শিশুদের টিকা দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস.এম. আলমগীর বেনারকে বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা প্রায় ১২ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এর মধ্যেই প্রায় আট কোটি মানুষ দুই ডোজ টিকা এবং আরো দুই কোটি মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
“আশা করছি আগামী দুই–এক মাসের মধ্যেই আমরা ১২ কোটি টিকা দেয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারব,” বলেন তিনি।
সংক্রমণের ধারা বিশ্লেষণ করে সরকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আর বৃদ্ধি করেনি বলে তিনি জানান।
“বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার কারণে বাংলাদেশে সংক্রমণ কমে এসেছে,” জানিয়ে ড. আলমগীর বলেন, “আমরা ১২ বছরের বেশি সকল শিশুকে টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইজার টিকা রয়েছে।”
তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা বাতিল করা হয়নি, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ১৮ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়।
সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউনের আদলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এ ছাড়া ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার, যা তুলে নেয়া হয় ১৬ জুলাই।
গত বছর জুন মাস থেকে পুনরায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২৮ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ২৩০ জন। ৫ আগস্ট সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়।
পুনরায় ২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমে আসে। গত বছর ৭ নভেম্বর দেশের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭৮ জন।
তবে নতুন বছরের শুরু থেকেই সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২৫ জানুয়ারি একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৩৩ জন শনাক্ত হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি একদিনে সর্বোচ্চ ৪৩ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে এক হাজার ৫৯৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা করা নমুনার বিপরীতে শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৬ জনে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই হিসাবসহ দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৯০ জনে।