ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন, তিন করোনা রোগীর মৃত্যু
2021.03.17
ঢাকা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) বুধবার এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে করোনাভাইরাস আক্রান্ত তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আগুন লাগার পর রোগীদের দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় তাঁরা মারা যান।
হাসপাতালের নতুন ভবনের তিন তলায় সকাল আটটার দিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান দমকল বিভাগের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর কোনো হাসপাতালের কোভিড বা আইসিইউ ওয়ার্ডে এটি দ্বিতীয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। গত বছর ২৭ মে ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনাভাইরাস ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক ছালেহ উদ্দিন বেনারকে বলেন, “ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে স্থাপিত করোনা রোগীদের আইসিইউ ওয়ার্ড আগুনে প্রায় পুরোপুরি পুড়ে গেছে।”
“আমরা দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিভাতে পেরেছি। এ কারণে আগুন অন্যান্য স্থানে ছড়াতে পারেনি। দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে না আনলে হাসপাতালের বড়ো ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেত,” বলেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া বুধবার বেনারকে বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন ব্যক্তির মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। তাঁরা সবাই আইসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন।”
তিনি জানান, মৃত ব্যক্তিরা হলেন কাজী গোলাম মোস্তফা (৬৩), আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (৪৮) ও কিশোর চন্দ্র রায় (৬৮)।
কিশোর রায়ের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, গোলাম মোস্তফার বাড়ি ঢাকার দক্ষিণখান জানান গেলেও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এর ঠিকানা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানান বাচ্চু মিয়া।
তিনি বলেন, “আগুন শুরুর পর রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় ওই তিন রোগী মারা যান বলে আমাদের জানানো হয়েছে। তাঁদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে কোনো ময়না-তদন্তের প্রয়োজন হবে না।”
মারা যাওয়া তিনজনের কেউ আগুনে দগ্ধ হননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। তবে আইসিইউতে থাকা অনেক যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বলে জানান তিনি।
ঘটনা তদন্তে কমিটি
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য হাসপাতালের এনেসথেইসওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. মোজাফ্ফর হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে কমিটিকে সময় দেয়া হয়েছে।
ঘটনা তদন্তে দমকল বাহিনীও তিন সদস্যের একটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
দমকল বাহিনীর সহকারী পরিচালক ছালেহ আহমেদ বলেন, “মূলত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে আমরা মনে করছি।”
তিনি বলেন, “আইসিইউ ওয়ার্ডে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ওই অক্সিজেন লাইনে কোনো কারণে ছিদ্র হয়ে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া গ্যাসের সাথে বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগ ঘটার কারণে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। তদন্ত শেষ হলেই প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতালে এই অগ্নিকাণ্ড করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় কিছুটা হলেও সমস্যা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আমাদের দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে। আবার আইসিইউ’র প্রয়োজন বেড়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের খুব কম সংখ্যক আইসিইউ বেড রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে চিকিৎসার মান ভালো। আগুন লেগে আইসিইউটি পুড়ে গেলো। এটা দ্রুত সচল করতে হবে।”
“ওই মানের আরেকটি আইসিইউ প্রস্তুত করতে সময় ও অর্থ প্রয়োজন হবে,” মন্তব্য করে অধ্যাপক নজরুল বলেন, “যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আমাদের আবারও আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৮৬৫ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি হিসাবে দৈনিক সংক্রমণের এই সংখ্যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
নতুন সংক্রমণসহ সারাদেশে গতবছর ৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ১১ জন মারা যাবার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৬০৮ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি আট লাখ ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ২৬ লাখ ৭৩ হাজারের বেশি।