দুবাই থেকে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান গ্রেপ্তার
2019.10.04
ঢাকা
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। যাঁর নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ ছিল।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ইন্টারপোল তাঁর গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে বেনারকে জানান পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা।
৪৯ বছর বয়সের জিসানের বিরুদ্ধে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক দ্রব্য রাখাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
প্রায় দুই দশক আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় জিসানের নাম রয়েছে।
জিসানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি প্রেসনোট দিয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) উদ্যোগে ও এনসিবি দুবাইয়ের (ইন্টারপোল) সহযোগিতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে জিসানকে দ্রুত বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
দীর্ঘদিন পরে হলেও দেশের একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর আটক হওয়াকে ইতিবাচক মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবঃ) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বেনারকে বলেন, যেসব সন্ত্রাসী দেশে ছেড়ে পালিয়ে যায়, তাদের ধরা পড়া সহজ কথা নয়। অনেক সময় বিদেশে পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীদের কে কোথায় আছে তাও জানা যায় না।”
“সেখানে জিসান ধরা পড়েছে। বিষয়টা ইতিবাচক। এখন যত দ্রুত সম্ভব তাকে দেশে এনে বিচার হবে। তাহলে আরো অনেককে ধরা যাবে। অনেক অপরাধের খোঁজ জানা যাবে,” বলেন তিনি।
তাঁর মতে, “সন্ত্রাসীদের কোনো সীমান্ত নেই। যেকোনো সময় পুলিশ তাঁদের তাড়া করতে পারে জেনেই তারা বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ রাখে। জিসানের সাথেও এদেশের অনেকে এ ধরনের যোগাযোগ রেখেছিল কি না সেটাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।”
দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে
আইনি প্রক্রিয়ায় দুবাই থেকে জিসানকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তি নেই বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রে জিসান আহমেদকে ফেরানোর প্রক্রিয়া কী হতে পারে? জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) মহিউল ইসলাম বেনারকে বলেন, “জিসানকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
তিনি বলেন, “যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের প্রত্যার্পণ চুক্তি নেই, আমরা প্রয়োজন সাপেক্ষে সেসব দেশের সম্মতিতে মিউচুয়াল লিগ্যাল এগ্রিমেন্ট করে থাকি।”
“দুবাইয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা কিছু কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে," মহিউল ইসলাম বলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ক্যাসিনো কাণ্ডে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর নাম শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নাম নতুন করে আলোচনায় আসে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শামীম ও খালেদকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে জিসানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
মহিবুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার সময় জিসানের হাতে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া যায়। যাতে তাঁর নাম আলী আকবর চৌধুরী লেখা ছিল। পরে ঢাকা আর দুবাইয়ের এনসিবি মিলে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয় যে, তিনিই বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান।
কে এই জিসান
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ জন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ একটি তালিকা করে। জিসান আহমেদ ওরফে মন্টি তাদেরই একজন। সে সময় পলাতক জিসানকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল।
জানা যায়, রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, মালিবাগ বাড্ডাসহ বেশ কিছু এলাকায় জিসানের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। এসব এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে জড়িত ছিলেন জিসান।
২০০৩ সালের ১৪ মে ঢাকার মালিবাগে একটি হোটেলে জিসানকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযানে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের দুই কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ওই হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।
পুলিশের ধারণা, এরপরেই জিসান ভারত হয়ে দুবাইয়ে পালিয়ে যান। তবে শীর্ষ এই সন্ত্রাসীকে ধরতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় বাংলাদেশ পুলিশ। তাঁদের অনুরোধে জিসানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটেও জিসান বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ঘটানো এবং বিস্ফোরক বহনের অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ রয়েছে। রাজধানীর খিলাওয়ে জন্ম নেওয়া জিসানের বাংলাদেশের পাশাপাশি ডোমিনিকান রিপাবলিকের নাগরিকত্ব রয়েছে বলেও ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে প্রাপ্তি রহমান।