ক্রসফায়ার বিরোধী সমাবেশ: ইমরান এইচ সরকার বিকেলে আটক, রাতে মুক্ত

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.06.06
ঢাকা
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে ঢাকার শাহবাগ থেকে আটক করে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের র‍্যাব সদস্যরা। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে ঢাকার শাহবাগ থেকে আটক করে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের র‍্যাব সদস্যরা। ৬ জুন ২০১৮।
বেনারনিউজ

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে বুধবার বিকেলে শাহবাগ থেকে তুলে নিয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে ছেড়ে দিয়েছে র‍্যাব।

শাহবাগ মোড়ে পুলিশের অনুমতি ছাড়া মাদক বিরোধী অভিযানে ‘ক্রসফায়ার’ বিরোধী সমাবেশ ডাকায় তাঁকে আটক করে নিয়ে যায় র‌্যাবের সদস্যরা।

“শাহবাগে অবৈধ সমাবেশ করার অপরাধে তাঁকে আটক করা হয়েছে,” বলে বুধবার বিকেলে বেনারকে জানান র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ইমরানুল হাসান।

তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু তিনি তা না করে শাহবাগে সমাবেশ করছিলেন।”

ইমরানুল হাসান বলেন, এর আগে অনুমতি ছাড়া এ ধরনের সমাবেশ করেন ইমরান সরকার। ভবিষ্যতে অনুমতি ছাড়া এ ধরনের সমাবেশ না করতে তাঁকে সতর্ক করে পুলিশ। তিনি সেই সতর্কতা না মেনে আজ আবার শাহবাগে সমাবেশ করছিলেন।

তবে “জিজ্ঞাসাবাদের পর ইমরান এইচ সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে,” বলে রাত ১১ টার দিকে বেনারকে জানান ইমরানুল হাসান।

চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে ‘ক্রসফায়ারে’ মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে গত রোববার ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

বুধবার পুনরায় শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য ইমরান এইচ সরকারের মোবাইল ফোন থেকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। বার্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাকে ‘ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে মানুষ খুন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বিকেলে শাহবাগে ‘ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে মানুষ খুন’ বন্ধের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করার সময় গণজাগরণ মঞ্চের নেতা–কর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ ও র‌্যাব-৩।

গণজাগরণ মঞ্চের নেতা–কর্মীরা পুলিশ ও র‌্যাবের বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা যৌথভাবে তাদের ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা করে। এ সময় মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নেতা–কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে র‌্যাব-৩-এর সদস্যরা ইমরান এইচ সরকারকে আটক করে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যান। মাইক্রোবাসের সামনে পেছনে র‌্যাবের দু’টি পিকআপ প্রহরায় ছিল।

২০১৩ সালে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের দায়ে যুদ্ধাপরাধ আদালত ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে একদল তরুণ। এক রাতের মধ্যেই সেই ছোট সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

সেই সমাবেশের বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দাবি ওঠে সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির। সকল সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। ইমরান হয়ে ওঠেন জননেতা।

গণজাগরণ মঞ্চের দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধ বিচারে আইন সংশোধিত হয়। কয়েক মাস শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ রাখে মঞ্চের নেতাকর্মীরা।

দীর্ঘ আন্দোলন ও দলীয় কোন্দলে এক সময় জনগণের কাছে আবেদন হারায় গণজাগরণ মঞ্চ। এরপর সংগঠনটি বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে, ইমরান এখনো সেই গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র।

ইমরান সরকারকে তুলে নিয়ে যাবার ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “মেয়াদের শেষ সময়ে সরকার কোনো গণ-আন্দোলন হতে দেবে না। হয়তো সে কারণে তাঁকে সাবধান করার জন্যই এই আটকের ঘটনা।”

তিনি বলেন, “দেশের মানুষ চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে ভীত, আতঙ্কিত। কেউ রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। তবে, ইমরান যে প্রতিবাদ করতে গেছে সেটি একটি ভালো দিক। সে অন্তত প্রতিবাদ করার সাহস করেছে।”

বিচার বহির্ভূত হত্যা তদন্তের দাবি জাতিসংঘের

বাংলাদেশে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান।

বুধবার জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের (ইউএনএইচআরসি) হাই কমিশনার জাইদ আল-হুসেইন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে অবৈধ মাদক চোরাচালান ও ব্যবসা ব্যক্তি এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য চরম দুদর্শা বয়ে আনে, কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যা, স্বেচ্ছাচারমূলক গ্রেপ্তার কিংবা মাদক ব্যবহারকারীদের ওপর ইচ্ছামাফিক অভিযোগ আরোপ কোনো সমাধান হতে পারে না।”

এত বেশি সংখ্যক মানুষ নিহত হবার পর সরকারের পক্ষ থেকে ‘নিহতদের কেউই নিরপরাধ ছিলেন না’ বলে সাফাই গাওয়া প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাইদ।

এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু যে কোনো প্রকারের তদন্ত নয়, এইসব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে স্বাধীন, স্বচ্ছ ও অর্থবহ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

এদিকে মাদকবিরোধী অভিযানে মঙ্গলবার রাতেও চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইউনুস মিজি ওরফে সুমন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে গতকাল বুধবার মানিক মিয়া (৩০) নামের এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত দুজনই মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ নিয়ে গত ২৩ দিনে মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্দুকযুদ্ধে ১৩৪ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৭১ জন এবং র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ এই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ১০৫।

বাকি ২৯ মাদক ব্যবসায়ী দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

তবে চলমান মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার গণভবনে এক ইফতারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন বলে জানায় বাসস।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।