মাদক বিরোধী অভিযানে নিহতরা নিরীহ নয়: প্রধানমন্ত্রী

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.05.30
ঢাকা
গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০ মে ২০১৮।
সৌজন্যে: বাসস

গত দু-সপ্তাহ ধরে চলা মাদক বিরোধী অভিযানে নিহতদের কেউই নিরীহ মানুষ নয় বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই অভিযান দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি দিয়েছে এবং এই অভিযান তাঁদেরই দাবি।

বুধবার সরকারি বাসভবনে সদ্য সমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অভিযান করতে গেলে ‘কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে’।

তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো নিরীহ মানুষ অভিযানে শিকার হলে তাঁর সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

গত ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানে বুধবার সাত জেলায় আরও ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে বুধবার পর্যন্ত এই অভিযানে নিহতের সংখ্যা ১২৭।

পুলিশ ও র‌্যাব বলছে, অভিযানে নিহতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। আবার অনেকেই নিজেদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তবে দেশে–বিদেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করা হচ্ছে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশ সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে দেখা করে মাদক বিরোধী অভিযানে প্রাণহানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বললেন

সংবাদ সম্মেলনটি ভারত সফর নিয়ে আয়োজন করা হলেও তাঁর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল মাদক বিরোধী অভিযানে প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন পুলিশ-র‍্যাব একটা অভিযানে যায়, তখন তাঁদের একটা অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত যে কটি ঘটনা ঘটেছে আপনারা অন্তত একটা ঘটনা দেখান যে কোনো নিরীহ ব্যক্তি এর শিকার হয়েছে! যদি কোনো নিরীহ ব্যক্তি শিকার হয়ে থাকে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলে তিনি জানান, “কিন্তু মাদক দূর করতে হবে সমাজ থেকে। এটা এক সময় সকলেরই দাবি ছিল।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাদক সমাজের জন্য একটা ব্যাধির মতো। আপনারাই পত্রপত্রিকায় লিখেছেন মাদকের বিরুদ্ধে। আজকে যখন মাদক বিরোধী অভিযান চলছে তখন আবার আপনারা কোনটি কীভাবে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার শুরু করেছেন। আপনারা কি চান, অভিযানটা চলুক নাকি বন্ধ হয়ে যাক?”

শেখ হাসিনা বলেন, “খুব স্বাভাবিক, এই ধরনের একটা অভিযান চালাতে গেলে কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। কোনটা বড় করে দেখবেন? অভিযানটা? না মাদক বন্ধ করা? ”

তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান করতে গেছি, তখনো কিন্তু একই প্রশ্ন এসেছে। এখন সন্ত্রাস আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এখনো বিশ্বের অনেক সভ্য দেশে প্রতিনিয়ত অনেক ঘটনা ঘটছে। অথচ বাংলাদেশকে আমরা সেদিক থেকে অনেক ভালো অবস্থানে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

তাঁর মতে, “কাজেই মাদকবিরোধী যে অভিযান চলছে, তাতে সারা দেশের মানুষ কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছে। এটা দেশের মানুষের দাবি।”

মাদকের মূল হোতা গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা কাকে গড ফাদার বলেন সেটা আমি জানি না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি কে গড ফাদার, কে ডন, কে কী সেটা কিন্তু আমরা বিচার করছি না। যারাই এর সঙ্গে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে এতটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

হাসিনা বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। আমরা কিন্তু অপারেশনে হঠাৎ করে যাইনি।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কেউ যদি মাদকের সাথে যুক্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে বাহিনীর হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আমি যখন ধরি ভালো করেই ধরি এটাতো ভালো করে জানেন।”

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ

দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। এসব হত্যার বিষয়ে আরও সতর্ক হতে বলেছেন তিনি।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান। বার্নিকাট বলেন, “সরকারের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে যারা মারা যাচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের আইনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে। অভিযুক্ত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিত।”

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সরকারও (যুক্তরাষ্ট্রের সরকার) বাংলাদেশ সরকারের মতো জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়া সবার অঙ্গীকার। কিন্তু সেটা হতে হবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।”

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মানুষ মারার পরিকল্পনা আমাদের নেই। কাউকে হত্যা করার নির্দেশ সরকার দেয়নি। অভিযান হচ্ছে গোয়েন্দা তালিকা ধরে।”

আসাদুজ্জামান বলেন, কোনো ধরনের ‘ক্রসফায়ার’ হচ্ছে না। নিরাপত্তা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে ‘গান ফায়ার’ করছে।

টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একরামসহ সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হবে। সব ঘটনাই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে তদন্ত করা হবে। যদি ন্যায়সংগতভাবে না হয়, তাহলে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।