গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করবে ইসি
2018.04.26
ঢাকা

আসন্ন খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে ওই দুটি এলাকায় ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের করণীয় ঠিক করতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। ওই সভায় পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, গুজব সৃষ্টি করে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা হতে পারে।
“পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সভায় বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা হতে পারে। তাই তাঁদের প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের মধ্যে ও নির্বাচনের পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” বেনারকে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ।
তবে কবে থেকে ও কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও মোবাইল অপারেটরদের সাথে বৈঠকে বসবে বলে জানান তিনি।
হেলালুদ্দীন বলেন, “তাঁদের (আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী) মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যাবে।”
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী আচরণবিধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিষয়টি এখনো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই ইসি এই সিদ্ধান্ত নিলো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিবি-র্যাবের মহাপরিচালকসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা-গাজীপুরের প্রশাসন-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গণমাধ্যমকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ এবং তাঁদের কাজের পরিধি নিয়েও একটি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান একটি বাহিনীর প্রতিনিধি। জবাবে সিইসি বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের যে পরিচয়পত্র ইসি থেকে সরবরাহ করা হয় সেখানেই নীতিমালা রয়েছে। নতুন করে কিছুর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই সেনা মোতায়েন করা হবে না; কমিশনের এ সিদ্ধান্ত রয়েছে। এই ভোটে বিজিবি-র্যাব-পুলিশসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আধা সামরিক বাহিনী থাকবে। প্রয়োজনে দেশের যে কোনো এলাকা থেকে আরও বেশি সংখ্যক নিরাপত্তা সদস্য আনা হবে।
সচিব বলেন, কমিশনের প্রতি বিএনপির আস্থা রয়েছে বলেই ভোটে অংশ নিচ্ছে।
তবে কারিগরিভাবে শুধু ওই দুটি নির্বাচনী এলাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ ব্যাপার বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
“বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে আমরা মূলত ফেসবুকই বুঝি,” মন্তব্য করে তিনি বলেন “ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ফেসবুককে সাথে নিয়ে করতে হয়।”
“আমরা আমাদের বিবেচনায় কোনো কিছুকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলতে পারি। আবার ফেসবুকের বিবেচনায় সেটা আপত্তিকর নাও হতে পারে। সুতরাং, নির্বাচনের আগে, মধ্যে ও পরে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন,” যোগ করেন ড. শাহজাহান।
“আবার ওই দুই এলাকায় বন্ধ রেখে সারা দেশে খোলা রাখলে কোনো লাভ হবে না,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“আমরা এখনো নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব পাইনি,” জানিয়ে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “প্রস্তাব পাওয়ার পর আলোচনার মাধ্যমে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
তথ্যের প্রবাহ কমবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের নির্বাচনের জন্য নতুন বলা যায়। আমাদের নির্বাচনী আচরণবিধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথা এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিনে ও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ রাখার কিছু সুবিধা ও কিছু অসুবিধা রয়েছে।
তিনি বলেন, “এটা ঠিক যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গুজব বা উসকানিমূলক কনটেন্টগুলো হয়তো বন্ধ করা যাবে। কিন্তু এর একটি খারাপ দিকও আছে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালু থাকলে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে, ভোট জালিয়াতি হলে বা সহিংসতা হলে সেখানে উপস্থিত যে কেউ ছবি তুলে বা ভিডিও করে জনগণকে জানাতে পারবে বলে মন্তব্য করেন ড. আতাউর।
তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন করার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হলে আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবো। অ্যাকসেস-টু-ইনফরমেশন বন্ধ হবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বা সরকার যা বলবে আমাদের তাই বিশ্বাস করতে হবে।”