নির্বাচনী সহিংসতায় শিশুসহ নিহত সাত
2016.03.31

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সহিংসতা ও হানাহানির ঘটনায় বৃহস্পতিবার এক শিশুসহ কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন র্যাব–পুলিশের সদস্য ও প্রার্থীসহ কয়েকশ মানুষ।
এর আগে ২২ মার্চ প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১ জন নিহত ও সহস্রাধিক আহত হয়েছিলেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২২। গতকালের সাতজনসহ ওই সংখ্যা দাঁড়াল ২৯।
গতকাল দ্বিতীয় ধাপে ৪৭ জেলার ৬৩৯টি ইউপির নির্বাচনে ৬ হাজার ২০৫টি কেন্দ্রের ৩২ হাজার ২১টি বুথে ভোট গ্রহণ হয়।এ সময় ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি, বোমা বিস্ফোরণ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছুড়েছে। নির্বাচন কমিশন ৩১টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে।
নিহতদের মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক শিশু, মাদারীপুরে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে দুজন এবং নাটোরের লালপুর, যশোর সদর ও জামালপুরের মেলান্দহে একজন গ্রামবাসী রয়েছে। অনিয়ম, হানাহানি ও জবরদস্তির প্রতিবাদে বেশ কিছু ইউপিতে সরকারি দল ছাড়া অন্য প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন।
এর আগে ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের তুলনায় গতকালের নির্বাচনে সহিংসতা, জবরদস্তি ও প্রাণহানি কম হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে। মোট ছয় ধাপে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হবে। শেষ ধাপের ভোট গ্রহণ হবে ৪ জুন।
সন্ত্রাসীর গুলিতে শিশু নিহত
কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়নের মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে রানা মোল্লা নামে এক ব্যক্তি ২৫-৩০ জন লোক নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার চেষ্টা চালান। রানা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন আয়নালের লোক হিসেবে পরিচিত।
তাঁদের তাণ্ডবে ওই কেন্দ্রের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। এতে গুলিতে বিদ্ধ হয়ে ৯ বছরের শিশু শুভ কাজী মারা যায়। মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শুভ তাঁর মায়ের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে এসেছিল। তার বাবা হালিম কাজী পেশায় অটোরিকশা চালক।
ওই ঘটনায় হাজেরা বেগম নামে এক বৃদ্ধাও গুলিবিদ্ধ হন। তিনিও ভোট দিতে এসেছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, নির্বাচনে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কৌশল পরিবর্তন করেছে । যে কারণে প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ চলাকালে প্রাণহানি বেশি ঘটেছে।
নির্বাচন শেষে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিইসি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সিইসি আরও বলেন, ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। যে কারণে আশা করা যায় পরের ধাপের নির্বাচনগুলো আরও সুষ্ঠু হবে।
প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে দাবি করে সিইসি বলেন, কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সার্বিক অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে।
নির্বাচন খারাপ হয়েছে:বিএনপি
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় প্রাণহানির ঘটনাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন । এর মাধ্যমে তিনি খারাপ নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সিইসির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ শেষে মো. শাহজাহান সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মো. শাহজাহান বলেন, যে সব জায়গায় অনিয়ম হয়েছে সে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বিএনপি নতুন করে চিন্তা করবে নির্বাচনে থাকবে কি থাকবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কোনো নির্বাচনেই তারা সফলতা দেখাতে পারেনি।
নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ বলার সুযোগ নেই: হানিফ
নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ । তিনি বলেছেন, ছয় হাজারের বেশি কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
নির্বাচনী সহিংসতা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, “আমাদের দেশে সাধারণত দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিশেষ করে মেম্বার নির্বাচনে সামাজিক দ্বন্দ্বের অনেকটা বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেটা আমরা অতীতে বহু নির্বাচনে দেখেছি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই সামাজিক-গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে সংঘাত ও সহিংসতা হয়। তারপরও দুঃখজনক কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।”
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মত
গতকালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর ডেমোক্রেসিওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোট ব্যবস্থাপনায় অনেক ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, বিলম্বে ভোটগ্রহণ শুরু করা, ভোটকেন্দ্রের আশপাশে প্রচার ও তাতে শিশুদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
ব্রতীর প্রাথমিক প্রতিবেদনে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণেও অনিয়ম, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।