ঢাকার মেয়র নির্বাচন আদালতে স্থগিত, সরকারকে দুষছে বিরোধীরা
2018.01.17
ঢাকা

তফসিল ঘোষণার এক সপ্তাহের মাথায় বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন ও সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত।
জাতীয় নির্বাচনের আগে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় সরকারই কৌশল করে এ নির্বাচন বাতিল করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্ষমতাসীনেরা। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, যে কারণেই নির্বাচন স্থগিত হোক না কেন, এতে সংবিধান লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটল।
“এর মাধ্যমে আমাদের সংবিধান লঙ্ঘিত হলো, আইন অমান্য করা হলো। কারণ, নির্বাচন করার বিষয়ে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা আছে,” প্রতিক্রিয়ায় বলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বেনারকে বলেন, “আমরা নাগরিকরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলাম। যে ত্রুটিগুলো ছিল, তা দূর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দিতে পারত আদালত। সেটা না করে ডিএনসিসি উপনির্বাচন স্থগিত করায় কে লাভবান হলো?”
গত ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হকের আকস্মিক মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ৯ জানুয়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি মেয়র পদে উপ নির্বাচনসহ উত্তর ও দক্ষিণ সিটির নতুন ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নির্বাচন হওয়ার কথা।
ঢাকা উত্তর সিটির পুরোনো ৩৬টি ওয়ার্ডের সাথে গত বছর নতুন করে অন্তুর্ভুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডসহ মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৪টি। গত বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়।
কেন স্থগিত
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং তফসিলের কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন নতুন করে ওয়ার্ড হিসেবে যুক্ত হওয়া বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
ওই রিটের শুনানি শেষে বুধবার রুলসহ নির্বাচন স্থগিতাদেশ দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। রুলে ডিএনসিসি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটকারী আতাউর রহমানের পক্ষে মোস্তাফিজুর রহমান খান ও আহসান হাবিব ভূঁইয়া এবং জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কামরুল হক সিদ্দিকী ও মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন সেলিম আদালতে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান।
এ বিষয়ে আহসান হাবিব ভূঁইয়া বেনারকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। অথচ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত ভোটার তালিকাই প্রকাশ করা হয়নি।”
“এ ছাড়া আইন অনুযায়ী মনোনয়নপত্রে তিন’শ ভোটারের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ভোটার তালিকা প্রকাশ না হলে সেটা কীভাবে সম্ভব?” তাঁর প্রশ্ন।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, মেয়রের পদসহ সিটি করপোরেশনের শতকরা ৭৫ ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে করপোরেশন যথাযথভাবে গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হয়।
রিট শুনানিতে আহসান হাবিব ভূঁইয়া বলেন, “উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড ধরলে কাউন্সিলরের সংখ্যা ৭৫ শতাংশ হয় না। কারণ নতুন এই ১৮টিতে নির্বাচনই হয়নি। এ জন্য মেয়র পদে এই নির্বাচন বৈধ নয়।”
তবে আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেই এই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেই নির্বাচনের তফসিল, সার্কুলার ঘোষণা করা হয়। ভোটার তালিকাও প্রস্তুত রয়েছে।”
রায়ের কপি পাওয়ার পরেই এ উপনির্বাচনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান হেলালুদ্দিন।
সরকারকে দোষারোপ বিএনপির
জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজধানীর এই উপনির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দল বিএনপিও। এরই মাঝে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে সরকারকেই দুষছে দলটি। এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনেরও যোগসাজশ দেখছে তারা।
এ প্রসঙ্গে বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “ত্রুটিপূর্ণ তফসিলের কারণেই রিট করার সুযোগ পেয়েছেন সংক্ষুব্ধরা। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সরকারের নির্দেশেই আইনি ত্রুটি রেখে তফসিল ঘোষণা করেন। ডিএনসিসি উপনির্বাচন বন্ধ করতে এটা সরকারের নীলনকশারই অংশ।”
“সরকার যখন বুঝতে পেরেছে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র উপনির্বাচনে তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত, তখনই কৌশলে নিজেদের লোক দিয়ে রিট করিয়ে নির্বাচন স্থগিত করেছে,” বেনারকে বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তবে বিএনপির আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্ষমতাসীনরা।
“আদালত উপনির্বাচন স্থগিত করেছেন, এখানে সরকারের যোগসাজশের বিষয় নেই,” রায়ের পর রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।