খালেদা জিয়া অসুস্থ, তবে অবস্থা জটিল নয়: মেডিকেল বোর্ড

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.04.03
ঢাকা
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ঢাকার নয়াপল্টনে প্রচারপত্র বিলি করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ঢাকার নয়াপল্টনে প্রচারপত্র বিলি করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১ এপ্রিল ২০১৮।
নিউজরুম ফটো

স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তবে তাঁর অবস্থা খুব জটিল নয়। মঙ্গলবার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চার-সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের এই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শামসুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ওনার শারীরিক অবস্থা জানতে রক্তের কিছু পরীক্ষা ও এক্স-রে করা প্রয়োজন। ওনাকে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে।

তবে গতকাল বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম এবং বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়াকে কিছু নতুন ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খেতে চাইছেন না।

কারাগারের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, খালেদা জিয়া যাতে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন সেই চিন্তাভাবনা চলছে। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত চিকিৎসককে কারাগারে পাঠানো হতে পারে। তাঁকে পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য কারাগারের বাইরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নেওয়া হতে পারে।

গতকালই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে তাঁকে জামিন দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের এজেন্ট হয়ে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে দমনের কাজ করছে।

নেতৃবৃন্দ তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “দুদক হলো বিরোধী দল দমন নিপীড়নের নিষ্ঠুর যন্ত্র। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই দুদক বিরোধী দলকে দমনে নিপীড়কের ভূমিকায় নেমেছে।”

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন

জানতে চাইলে ড. শামসুজ্জামান বেনারকে বলেন, “আমরা গতকাল মেডিকেল প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছছে।”

“আমরা আমাদের প্রতিবেদনে বলেছি, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তবে তাঁর অবস্থা খুব জটিল নয়,” তিনি বলেন।

ড. শাসমুজ্জামান বলেন, “আমরা ওনার সাথে দেখা করতে গেলে উনি আমাদের সাথে সহযোগিতা করেছেন। উনি প্রায় ৬০ ফুট দূর থেকে আরেকজনের সহায়তা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন।”

তিনি বলেন, “ওনার পুরোনো হাঁটুর ব্যথা আছে, তবে তা খুব খারাপ নয়। তবে নতুন করে তাঁর কিছু রোগ ধরা পড়েছে। যেমন হাতে ও ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়েছে। আমরা ওনাকে ওষুধ দিয়েছি। উনি বলেছেন, ওনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধগুলো খাবেন।”

তিনি বলেন, “আমরা তাঁর কিছু রক্তের পরীক্ষা ও এক্স-রে করতে বলেছি। প্রয়োজন হলে আবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয় খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে। রায় ঘোষণার পর থেকেই নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ

বিএনপির আট শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই অভিযোগ খণ্ডাতে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যা, সাজানো ও কাল্পনিক' অভিযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতেই সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ব্যবহার করছে।”

তিনি বলেন, ‌“দুদক হলো বিরোধী দল দমন নিপীড়নের নিষ্ঠুর যন্ত্র। সংস্থাটি বিরোধী দলকে দমনে নিপীড়কের ভূমিকায় নেমেছে।”

রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে একটা অশুভ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হচ্ছে দুদককে।

তিনি বলেন, “রাজকোষ কেলেঙ্কারি, সমস্ত ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে মহা হরিলুট করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা। দেশ থেকে যখন কোটি টাকা পাচার করে বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীনদের সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে, ঠিক তখন বিএনপির নেতা ও তাঁদের পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আগামী নির্বাচনের বৈতরণি পার করতে দুদককে দিয়ে এখন নতুন প্রকল্প খুলেছে সরকার।”

রিজভী বলেন, “দুদকের অভিযোগের নেপথ্যে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিষ্ক্রিয় করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা। কিন্তু সরকার তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারবে না।”

দুদকের সূত্র অনুযায়ী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ এবং ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।

বিএনপির ওই আট নেতার বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ তদন্ত করছে কমিশন।

তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বেনারকে বলেন, “বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনার উদ্দেশ্য হলো আবারও ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি এক দলীয় নির্বাচন করা।”

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। অবিলম্বে তাঁকে জামিন দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে।

তবে বিএনপির এই অভিযোগ অস্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “স্বাধীন দুদক তাদের কাজ করছে। তারা তো অভিযোগ করেই। এসবের কোনো ভিত্তি নেই।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।