অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে ইইউ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.04.05
160405-BD-migrant-620.jpg ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিবাসন বিষয়ে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৫ এপ্রিল ২০১৬।
অনলাইন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ জন্য অর্থ সহায়তার পাশাপাশি বাংলাদেশকে আনুষঙ্গিক সব ধরনের সহযোগিতা দিতে রাজি আছে ইইউ।

তবে ইউরোপে অবৈধ বাংলা​দেশির সংখ্যা কত, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে চায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল।বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে যে, ইউরোপে ৮০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে।

“গণমাধ্যম এ সংখ্যা কোথা থেকে পেল, তা আমি জানি না। তারা যে সংখ্যাটি আমার কাছ থেকে পায়নি, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারি,” সাংবাদিকদের জানান  ইউরোপের বহির্গমন সেবাবিষয়ক উপমহাসচিব ক্রিশ্চিয়ান লেফলার।

সংখ্যা প্রসঙ্গে লেফলার বলেন, “এ নিয়ে আমি কিছু বলব না। সংখ্যাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও ইইউকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিবাসন বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সম্ভাব্য ব্যাপক রাজনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে আরও ব্যাপক সহযোগিতার সম্ভাব্যতা খুঁজে বের করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক এবং ইইউ দশ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন ক্রিশ্চিয়ান লেফার। নগরীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় এই বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এ সংক্রান্ত আলোচনা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে দু’পক্ষই সম্মত হয়েছে।

সংখ্যাটি যেভাবে পায় গণমাধ্যম

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি থাকার কথা গণমাধ্য​মকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রতিনিধি দলটি গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে।

তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের হিজাব অনুযায়ী প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি সেখানে (ইউরোপে) আছে এবং প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ হয়ে গেছে।

“তারা বলেছেন, হয় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, না হয় ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, এরকম বিভিন্ন কারণে এরা অবৈধ হয়েছে । তাদের কীভাবে ফেরত আনা যায়, সে নিয়ে কথা বলাই ছিল তাদের মূল উন্মেষ।”

“তালিকা পাওয়ার পর আমরাও দেখব কীভাবে আনা যায় এবং কেন তারা গিয়েছেন,” বলেন আনিসুজ্জামান কামাল ।

তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, আপনারা ৮০ হাজার নিয়ে সমস্যা ফেইস করছেন, আর আমরা ৫ লাখ রোহিঙ্গা ফেইস করছি, আরও প্রায় দুই লাখ পাকিস্তানি রিফিউজি আছে এখানে।”

“আপনারা একটি অনুরোধ নিয়ে এসেছেন। আপনারাও আমাদের একটু সাহায্য করেন, কীভাবে রোহিঙ্গা ও পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানো যায়।”

বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে চায় ইইউ

ইউরোপ থেকে বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে কে না জানতে চাইলে ক্রিশ্চিয়ান মাফলার গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন,  ইউরোপজুড়ে লোকজন নিয়মিতভাবেই এ অবস্থায় পড়ছে। কেউ অবৈধ পথে গেছে, কেউ এক দেশে গিয়ে অন্য কোথাও অবৈধ হয়ে পড়েছে।

“বাংলাদেশের লোকজন যাতে নিরাপদে ফিরে এসে সামাজিক প্রক্রিয়ায় কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, সে জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছি,” জানান ক্রিশ্চিয়ান মাফলার।

“আমরা জানি ইউরোপের বিভিন্ন অংশে বাংলাদেশের লোকজন অবৈধ হয়ে পড়েছেন। কীভাবে তাঁতের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিবাসন নিয়ে একটি বৃহত্তর আলোচনার কাঠামো তৈরি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে,” বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদকে হক।

সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, গতকালের বৈঠকে উভয় পক্ষ গ্লোবাল মাইগ্রেশন পরিস্থিতি, মাইগ্রেশন ও ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত গ্লোবাল ফোরাম, মাইগ্রেশন সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য এজেন্ডা ২০৩০ সহ মাইগ্রেশন ও মহিলাটির সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকে নিয়মবহির্ভূত মাইগ্রেশনের ভয়াবহতা সম্পর্কে তথ্যগত প্রচার ও জনসচেতনতার ক্ষেত্রে ইইউ সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। এসময় নিয়মবহির্ভূত মাই গ্রান্টদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হয়।

নতুন চুক্তি নয়

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইইউ প্রতিনিধিদলটি আলোচ্যসূচিতে অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনার জন্য অ্যাডমিশন অ্যাগ্রিমেন্টের ওপর গুরুত্ব দিতে চেয়েছিল। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সময় বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ হয়ে পড়ে লোকজনকে ফেরত আনার ব্যাপারে সরকারের নির্ধারিত নীতি অনুসরণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ইইউ তার সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে অবৈধ হয়ে পড়ে লোকজনকে ফেরত পাঠাতে ওই অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে অ্যাডমিন অ্যাগ্রিমেন্ট সই করছে। এই চুক্তি সই করলে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কোনো দেশকে তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। ইইউ এ পর্যন্ত পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ ১৭টি দেশের সঙ্গে চুক্তিটি সই করেছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।