দার্জিলিংয়ে অচলাবস্থা: সিদ্ধান্ত না হলেও সবাই অবসান চায়
2017.08.29
কলকাতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিংএ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পাহাড়ের বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় কোনো সিন্ধান্ত না হলেও আলোচনাকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মঙ্গলবার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “এত দিন পরে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে।”
পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে সব দলই সহমত হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন তিনি।
বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও পরের বৈঠক ১২ সেপ্টেম্বর হবে বলে সাংবাদিকদের জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে চলমান অনির্দিষ্টকালের বন্ধ তুলে নেবার অনুরোধ জানালেও পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বনধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবার কথা জানিয়েছে দলগুলো।
প্রসঙ্গত দার্জিলিং পাহাড়ে গত ৭৮ দিন ধরে টানা বনধ চলছে। স্কুল কলেজ, বাজার হাট, কল কারখানা সবই বন্ধ। বন্ধ দার্জিলিংয়ের চা বাগানের উৎপাদনও। খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে পাহাড়ের জনজীবন এক রকম বিপর্যস্ত।
এই পরিস্থিতিতে গোর্খা ন্যাশনালিস্ট লিবারেশন ফ্রন্টের প্রধান মন ঘিসিং প্রথম মুখ্যমন্ত্রীকে দার্জিলিংয়ের অচলাবস্থা অবসানের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের কথা ঘোষণা করেন। তিনি পাহাড়ের সব দলকে এই বৈঠকে যোগ দেবার আহ্বানও জানান।
পরবর্তীতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পক্ষে চিফ কো–অর্ডিনেটর বিনয় তামাং মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মোর্চা প্রধান বিমল গুরুংও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আন্দোলনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যার পাশাপাশি বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বেনারকে বলেন, “দার্জিলিংয়ে গত দু মাস ধরে বন্ধের ফলে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। লেখাপড়া একদম বন্ধ। খাওয়া দাওয়াও বন্ধ। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াটা জরুরি।”
“পাহাড়ে শান্তি ফেরা জরুরি,” বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন মোর্চার চিফ কো–অর্ডিনেটর বিনয় তামাং।
বৈঠকে মোর্চার চিফ কো–অর্ডিনেটর বিনয় তামাং পাহাড়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা করেছেন। সেই সঙ্গে মোর্চা সমর্থকদের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এদিনের বৈঠক নিয়ে মোর্চার নেতা কল্যাণ দেওয়ান বেনারকে বলেন, “পাহাড়ের দলগুলি যে গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে সরে আসছে না সে কথা বৈঠকের শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তাঁরা পাহাড়ে ফিরে গিয়ে আলোচনা করে বনধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
তবে পাহাড়ে শান্তি ফিরবে কি না সেই বিষয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে কলকাতার এক কলেজ অধ্যাপক অবিনাশ দত্ত বেনারকে বলেন, “পাহাড়ে রাজনৈতিক দলগুলির অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে আলাদা গোর্খা রাজ্যের দাবি। বৈঠকে সেই দাবি তোলা হলেও মুখ্যমন্ত্রী তাতে আমল দেননি। এর আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।”
পাহাড়ের আন্দোলন
গম মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের সব বিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা ভাষা পড়ানোর ঘোষণা দিলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা তা না মেনে এর বিরোধিতায় মাঠে নামেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি জানান। কিন্তু প্রত্যাহার না হওয়ায় আন্দোলন চাঙা রাখার জন্য জনমুক্তি মোর্চার নেতারা শুরু করেন পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের আন্দোলন।
পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে গত ১২ জুন থেকে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের দার্জিলিং বনধ। এই আন্দোলনের নামে গত দু মাসে পাহাড়ে ব্যাপক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। বহু সরকারি সম্পত্তি ও গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে দার্জিলিং, কালিম্পং ও সুখিয়া পুখরিতে আইইডি ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় মোর্চা প্রধান বিমল গুরুংসহ ৭ মোর্চা নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে আনলফুল অ্যাকটিভিটিজ প্রিভেনশন আইনে মামলা করা হয়েছে। ফলে গুরুং বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।