হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ বাড়ল কয়েকগুণ
2017.07.10
ঢাকা

দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিজড়াদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে এ বছর তাঁদের জন্য রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ প্রায় পাঁচ গুণ বাড়িয়েছে সরকার। গত জুন ২৯ তারিখে পাশ হওয়া বাজেটের দলিল অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে হিজড়াদের জন্য ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ছিল মাত্র দুই কোটি ৩৫ লাখ।
নতুন বরাদ্দ অনুযায়ী জুলাই মাস থেকে দেশের প্রত্যেক হিজড়া প্রতি মাসে পাঁচ শ টাকার পরিবর্তে সাত শ টাকা পাবেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করলেও সারা দেশের হিজড়াদের সংখ্যার তুলনায় এই বরাদ্দ অত্যন্ত সামান্য বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে সরকার বলছে ভবিষ্যতে এ বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে।
সরকারি সমাজ সেবা অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, দেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় দশ হাজার।
তবে দেশে হিজড়াদের প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার বলে বেনারকে জানান হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পরিচালক ফসিউল আহসান।
“সরকারি ভাতার পরিমাণ খুবই কম; তবে বরাদ্দ বৃদ্ধি একটি ভালো উদ্যোগ। হিজড়ারা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাঁদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে, কাজের সুযোগ দিতে হবে। সুযোগ পেলে তাঁরা যে কোনো সাধারণ মানুষের মতো দক্ষতা দেখাতে পারে,” আহসান বলেন।
“বর্তমান সরকারই প্রথমবারের মতো হিজড়াদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাতার ব্যবস্থা করে। তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য এ বছর তাঁদের জন্য ১১ কোটি ৩৫ লাখ বরাদ্দ করেছ। গত বছর এই বরাদ্দ ছিল মাত্র দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা,” বলেন প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
তাঁর মতে, “এই ৭০০ টাকা কম সেটা ঠিক। কিন্তু আমরা তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ওপর জোর দিচ্ছি। কারণ, ভাতার টাকা যত বেশিই দেওয়া হোক না কেন সেই টাকা থাকে না; খরচ হয়ে যায়। তারা ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।”
তিনি বলেন, “হিজড়াদের জন্য বরাদ্দ করা টাকা সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এনজিও'র মাধ্যমে খরচ করা হবে।
“আমরা চাই হিজড়ারা এবং তাদের সন্তানেরা সমাজের সম্পদ হোক, বোঝা নয়। তারা আমাদের সমাজের মূল ধারায় ফিরে আসুক। আর এ জন্যই এ বাজেট বৃদ্ধি," আহমেদ বলেন।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিজড়ারা দলবদ্ধ হয়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে টাকা আদায় করে জীবন নির্বাহ করে। এদের প্রায় সবাই যৌন নির্যাতনের শিকার।
“আমাদের বাবা-মা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সবাই নির্যাতন করে; কাজ দেয় না। ভিক্ষা ছাড়া আমাদের আর কী উপায় আছে বলেন? সরকার আমাদের ৫০০-৭০০ টাকা দিচ্ছে প্রতি মাসে। এই টাকায় কী হয়?” প্রশ্ন তোলেন সাথি হিজড়া উন্নয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ।
তিনি বেনারকে বলেন, সরকারকে ধন্যবাদ যে অল্প হলেও আমরা মাসিক ভাতা পাচ্ছি। তা ছাড়া দিনাজপুরে সরকার আমাদের জন্য দেশের প্রথম স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে দিয়েছে।
“আমরা চাই সরকার আমাদের খেয়ে-পরে চলার মতো মাসিক ভাতা দিক; তাহলে কোনো হিজড়াকে আর ভিক্ষা করতে দেখবেন না,” ফিরোজ বলেন।
সিলেট শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. ক.ম. মাহবুবুজ্জামান বেনারকে বলেন, “হিজড়ারা সমাজে মারাত্মকভাবে অবহেলিত। পরিবার, সমাজ কোথাও এদের ভালো চোখে দেখা হয় না।”
“তাঁদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। এরা ইচ্ছা করে হিজড়া হয়নি। এদের জন্য মাসিক ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে,” তিনি বলেন।
ড. মাহবুবুজ্জামানের মতে, “মাসিক ভাতা প্রদানের পাশাপাশি হিজড়াদের বিভিন্ন কাজের সুযোগ দেওয়া হলে তারা আর রাস্তায় ঘুরে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করবে না। সমাজের বোঝা হবে না।”