জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে ভারত

ঝুমুর দেব
2017.03.24
গৌহাটি, ভারত
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফএর পাহারা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ এর পাহারা। আগরতলা, ত্রিপুরা। ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭।
AFP

গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন হাজারের বেশি জঙ্গি ভারতে পালিয়ে গেছে; বাংলাদেশি গোয়েন্দাসূত্রের এমন তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তার মতে, গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজানে জিম্মি করে ২০ জনকে হত্যার পর বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপক অভিযানের মুখে ভারতে বাংলাদেশি জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ এর এই কর্মকর্তা বেনারকে জানান, “গত দুই বছরে সাড়ে তিন হাজারের মতো সন্দেহভাজন জঙ্গি ভারতে প্রবেশ করার বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এদের বেশিরভাগই সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে হলি আর্টিজানে হামলার পর।”

ওই কর্মকর্তা জানান, “আমরা বাংলাদেশি গোয়েন্দাসূত্রে জানতে পেরেছি, জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও হরকাত আল-ইসলামি (হুজি)র অনেক শীর্ষ নেতা ভারতে লুকিয়ে রয়েছে। এদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরার সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে।”

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হালি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলার দায় ইসলামিক স্টেট স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার ওই ঘটনার জন্য বরাবরই ‘নব্য জেএমবি’কে দায়ি করে আসছেন। হলি আর্টিজানে হামলার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অভিযানে পুলিশের হাতে অন্তত ৪৮জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন মতে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশি জঙ্গিদের ভারতে অনুপ্রবেশের হার আগের বছরের তুলনায় ছিল তিনগুন।

উল্লেখ্য, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৪,০৯৬ কিলোমিটার। যার মধ্যে আসামের সাথে ২৬২, ত্রিপুরার সাথে ৮৬৫, মিজোরামের সাথে ১৮০, মেঘালয়ের সাথে ৪৪৩ এবং পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ২,২১৭ কিলোমিটার সীমান্ত।

“আমাদের ধারণা এই জঙ্গিরা ইতিমধ্যেই ভারতে অনেকগুলো ঘাঁটি বানিয়ে ভারতের বড়ো বড়ো শহরগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি করে ফেলেছে। পাশাপাশি, তারা ভারতে নিজেদের ভিত শক্ত করার জন্য জোরেসোরেই স্থানীয় সদস্য সংগ্রহ করছে,” বেনারকে বলেন বিএসএফএর ওই কর্মকর্তা।

গত জানুয়ারিতে বেনারনিউজ ভারতীয় একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানতে পারে যে, বাংলাদেশের দুইটি জঙ্গি সংগঠন; জেএমবি ও হুজি দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে হামলার পরিকল্পনা করছে।

ওই প্রতিবেদন মতে “জেএমবির সম্পাদক ইফতাদুর রহমান ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে গত ১২ জানুয়ারি ভারতে ঢুকে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে মিলিত হয়েছে।”

ইফতাদুর দিল্লি ভ্রমণ করেছে বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।

ওই প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, “জেএমবি এবং হুজি যৌথভাবে ভারতের প্রধান শহরগুলোতে বড়ো ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।”

ভারতে জেএমবির ৬০ সদস্য গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ এবং ভারতের মাটিতে সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর জন্য দিল্লি থেকে সম্প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

“যদিও আমাদের কাছে এখনো সন্দেহভাজনদের কারো নাম বা ছবি নেই, তবে আমরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ পেয়েছি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ” বেনারকে জানান আসাম পুলিশের এডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল পল্লব ভট্টাচার্য।

গত মাসে দুইজন উচ্চ প্রশিক্ষিত সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্য আসাম থেকে নলবাড়ি জেলায় পাড়ি দিয়েছে জানিয়ে পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আসাম পুলিশ ৬০জন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

ভারতের উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘ (আরএসএস), গত সপ্তায় এক ঘোষণাপত্রে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ইসলামি জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতার দায়ে অভিযুক্ত করেছে।

‘পশ্চিমবঙ্গে ক্রমবর্ধমান জিহাদি কার্যক্রম দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ শিরোনামে এই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “১৯৫১ সালের শুমারি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল শতকরা ৭৮.৪৫, আর সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী এখন সেটা শতকরা ৭০.৫৪।”

“এই ঘোষণাপত্রে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল জিহাদি কার্যক্রম এবং সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।”

এনডিটিভির সাথে এক সাক্ষাতকারে জানান আরএসএস এর ড. জিধুঁ বসু।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।