গোয়েন্দা তথ্যমতে বাংলাদেশের জঙ্গিরা ভারতে হামলার পরিকল্পনা করছে

ঝুমুর দেব
2017.01.26
গৌহাটি, ভারত
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ব্রহ্মপুত্র নদীতে ভারতীয় বাহিনীর টহল। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ব্রহ্মপুত্র নদীতে ভারতীয় বাহিনীর টহল। আসাম, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬।
AFP

ভারতের একটি গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে বেনারনিউজ জানতে পেরেছে, বাংলাদেশের দুইটি জঙ্গি সংগঠন দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে হামলার পরিকল্পনা করছে।

জামাত উল মুজাহিদিনি বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম (হুজি)’র জঙ্গিরা ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলে সংগঠিত হয়ে যৌথভাবে ধারাবাহিক আক্রমণের পরিকল্পনা করেছ বলে এই গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন মতে “জেএমবির সম্পাদক ইফতাদুর রহমান ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে গত ১২ জানুয়ারি ভারতে ঢুকে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে মিলিত হয়েছে।”

ইফতাদুর ইতোমধ্যে দিল্লি ভ্রমণ করেছে বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।

প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, “জেএমবি এবং হুজি যৌথভাবে ভারতের প্রধান শহরগুলোতে বড়ো ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করছে বলে তথ্য রয়েছে।”

ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স –বিএসএফের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বেনারকে জানান, ইফতাদুর রহমানের মূল নাম সাজ্জাদ হোসেন। গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায়।

এই কর্মকর্তা বলেন “আমাদের কাছে নিশ্চিত তথ্য রয়েছে যে গত ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লির জঙ্গিদের সাথে জেএমবি এবং হুজির একটি যৌথ সভা হয়।”

বিষয়টি ইতোমধ্যেই দিল্লিকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে হামলা পরিকল্পনার জন্য গত ২৪ জানুয়ারি সিলেটের বনগাঁও এলাকায় জেএমবি এবং হুজির শীর্ষ নেতারা আরেকটি সভায় মিলিত হন, সেখানে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

হুজি ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সক্রিয় একটি ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে এই সংগঠনটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। অন্যদিকে গত বছর জুলাইতে গুলশান হামলার জন্য বাংলাদেশের সরকারি সংস্থাগুলো জেএমবির একটি অংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবিকে দায়ী করে আসছে।

গত বছর ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন অ্যাজেন্সি (এনআইএ) এর একজন কমর্কতা বেনারকে জানিয়েছিলেন, গুলশান হামলার পরের দিন পশ্চিমবঙ্গে আইএস সন্দেহভাজন হিসেবে ভারতীয় নাগরিক মুহাম্মাদ মসিউদ্দিন ওরফে আবু মুসাকে গ্রেফতার করা হয়। সে জিজ্ঞাবাদে জানিয়েছে, আবু সুলায়মান নামে একজনের কাছ থেকে সে ভারতে আইএস-এর একটি বিশেষ সেল গঠনের দায়িত্ব পায়।

ওই কর্মকর্তা এও জানিয়েছিলেন, “ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে আবু মুসা হয়ত ঢাকার হলি আর্টিজান আক্রমণে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল।”

এনআইএ’র মতে জেএমবি আইএস-সম্পৃক্ত একটি সংঠন। তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বরাবরই বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গি গোষ্ঠীর অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করে আসছেন।

তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে জঙ্গি আক্রমণের জন্য দায়ী নব্য জেএমবি একটি আইএস মতাদর্শবাদী সংগঠন।”

গত জুলাইতে গুলশান হামলার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩৪জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তবে মনিরুল ইসলাম স্বীকার করেন, “কিছু নব্য জেএমবি নেতা ভারতে পালিয়ে গেছে।”

তিনি আরো যোগ করেন, “আমরা এখনো জানি না ঠিক কতজন ভারতে পালিয়েছে, তবে বেশ কয়েকজন পালিয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে নব্য জেএমবি প্রধান সালাউদ্দিন সালেহীন ভারতে আছে।”

মনিরুল ইসলামের মতে, গত এপ্রিলে জঙ্গি হামলায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সন্দেহভাজন হত্যাকারী শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং গুলশান হামলায় সম্পৃক্ত রিপনও ভারতে পালিয়েছে।

সহকারী পুলিশ মহা পরিদর্শক (এআইজি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের মতে দীর্ঘ এবং দুর্গম সীমান্তের কারণে জঙ্গিরা খুব সহজেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যেতে পারে।

তিনি বেনারনিউজকে বলেন “এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমরা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি।”

উল্লেখ্য, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৪,০৯৬ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর পঞ্চম দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমান্ত। ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে আসামের সাথে ২৬২, ত্রিপুরার সাথে ৮৬৫, মিজোরামের সাথে ১৮০, মেঘালয়ের সাথে ৪৪৩ এবং পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ২,২১৭ কিলোমিটার সীমান্ত।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, গুলশান হামলার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি বাহিনীর অভিযানের মুখে জঙ্গিগোষ্ঠীর ভারতে পালানোর প্রবণতা একটি স্বাভাবিক ঘটনা হবে সেটা অনুমান করা যায়।

আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক জিএম শ্রীবাস্তব বেনারকে বলেন, “বহুদিন থেকেই জেএমবি লুকিয়ে থাকার জন্য ভারতের মাটি ব্যবহার করছে। একইসাথে আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তরুণদের মধ্য থেকে তারা সদস্যও সংগ্রহ করছে। এই জায়গাগুলো বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খুবই কাছাকাছি।”

তিনি আরোও বলেন, “ভারতে এই মুহূর্তে জেএমবির ৭০টির বেশি ইউনিট সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।“

ঢাকা থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রাপ্তি রহমান

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।