গ্রেপ্তারের পর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নব্য জেএমবির কথিত আঞ্চলিক কমান্ডর নিহত
2017.03.02
ঢাকা

পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আজিমুল ইসলাম নামে সন্দেহভাজন এক জঙ্গি নিহত হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৩টার দিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ভবানীপুর ইউনিয়নের জামনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি বিদেশী পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, নিহত আজিমুল (২৪) নব্য জেএমবির সামরিক শাখার উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার ছিল। সে ‘আল আমিন’ ও ‘রনি’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে জঙ্গি কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল।
নিহত আজিমুলের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বুজরুগ রাধারামপুর গ্রামে। বাবার নাম নুরুল হুদা।
গত মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে আজিমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের সময় তার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পুলিশের দুই কনস্টেবল আবদুস সালাম ও ইসমাইল হোসেন আহত হয়েছেন বলে বেনারকে জানান বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
“এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে আজিমুল গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়,” জানান আসাদুজ্জামান।
বন্দুক যুদ্ধের আগে জেএমবির কয়েকজন সদস্যকে আটকের উদ্দেশ্যে আজিমুলকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানোর কথা জানান বগুড়ার শেরপুর থানার ওসি খান মো. এরফান।
বেনারকে তিনি বলেছেন, “আজিমুল শেরপুরের জোয়ানপুরে বোমা বিস্ফোরণ মামলার সন্দেহভাজন আসামি। গত বছরের এপ্রিল মাসে ওই জঙ্গি আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয়।”
বগুড়ার স্থানীয় সাংবাদিক ও দৈনিক সকালের খবরের প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন মিন্টু টেলিফোনে বেনারকে জানান, “আমরা যতদূর জেনেছি, আজিমুল এক সময় ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এক বছর আগে সে জেএমবিতে যোগ দেয়।”
ওই সাংবাদিক জানান, মাঝে মাঝে রাজারামপুর গ্রামে পালক বাবা আতাউর রহমানের বাড়িতে সে থাকত। ওই বাড়িতে জেএমবি সদস্যের আনাগোনা ছিল, অভিযোগ ছিল গোপন বৈঠক করারও।
বন্দুক যুদ্ধ সমাধান নয়
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে আসছে। প্রায় সব ঘটনার পর একইরকম বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে, যা নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন থেকে যায়।
“যখনই কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে, তখনই নিহত ব্যক্তিকে নব্য জেএমবির কোনো শাখার প্রধান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে সন্দেহ তৈরি হয়,” বেনারকে জানান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন।
“এরা কোন পর্যায়ের জঙ্গি তা বোঝা কঠিন। এসব ঘটনায় পুলিশ যা বলছে তার বাইরে তথ্য পাওয়ার সুযোগ না থাকায় সেটাই আমাদের সত্য বলে ধরে নিতে হচ্ছে,” বেনারকে জানান নূর খান।
তাঁর মতে, প্রতিটি বন্দুক যুদ্ধের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার।
নূর খান আরও বলেন, “গত ১৮ বছর জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করছি। লক্ষ করেছি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ প্রায় দমন হয়ে যায়। কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার তারা বড় আকারে আত্মপ্রকাশ করে।”
তাঁর মতে, জঙ্গিবাদ একটা ব্যাধি। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজটি হচ্ছে না।