আইএস সন্দেহে মালয়েশিয়ায় দুই বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
2017.01.24

ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয় পুলিশ দুই বাংলাদেশিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত ১৩ ও ১৯ জানুয়ারি মালয়েশীয় পুলিশের বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম ডিভিশনের কর্মকর্তারা মালয়েশিয়ার কোতা কিনাবালু ও কুয়ালালামপুর থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
মালয়েশিয়াসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর বলছে, দুই বাংলাদেশিকে কুয়ালালামপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বয়স ২৭–২৮ বছর। তাঁরা কুয়ালালামপুরে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করতেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের নাম, তাঁরা কবে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন, কীভাবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের বিশেষ বিভাগ কাউন্টার টেররিজম এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না।
“মালয়েশিয়া এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে কিছুই জানায়নি। আমরা সংবাদ মাধ্যম থেকেই বিষয়টি জেনেছি,” কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন।
ঢাকা থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এম এ এস কে শাহীন বেনারকে বলেছেন, গণমাধ্যমে তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত কিছু জানতে পারেননি।
বাংলাদেশ সরকার বরাবরই দেশে আইএসের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করে আসছে। তবে জেএমবি আইএস মতাদর্শ অনুসরণ করে ও একই কায়দায় হামলা চালায় বলে দাবি করছে। গত বছরের এপ্রিলে দাবিকের একটি সংখ্যায় জেএমবিকে এ দেশে আইএসের প্রতিনিধি বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলাকারী নিবরাজ ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় তামীম চৌধুরীর সঙ্গে নিহত তাওসিফ হোসেনও মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করেন। মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গিদের যোগাযোগ নিয়ে ১ জুলাই ক্যাফেতে হামলার পর থেকেই আলোচনা ছিল।
মালয়েশিয় পুলিশ যা বলছে
গ্রেপ্তারকৃত চার জনের ওই দলটি ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার সাবেক শিক্ষক ড. মাহমুদ আহমেদ ও ফিলিপাইন ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আবু সায়াফ গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল।
ড. মাহমুদ আহমেদ ২০১৪ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় মোস্ট ওয়ান্টেড। অন্যদিকে আবু সায়াফ গ্রুপের প্রধান ইসনিলন হাপিলন তাঁর দেশে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি।
গত বছর আইএস এক ভিডিও বার্তায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আবু সায়াফ গ্রুপকে তাদের প্রতিনিধি ও ইসনিলন হাপিলনকে এ অঞ্চলের প্রধান বলে ঘোষণা দেয়।
মালয়েশিয়ায় পুলিশের মহাপরিদর্শক খালিদ বলছেন, ড. মাহমুদ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি তিনি আবু সায়াফ গ্রুপের সঙ্গে হাত মেলান।
খালিদ আরও বলেন, ড. মাহমুদ ও ইসনিলন হাপিলন দুজনই আইএস প্রধান আবু বাকার আল বাগদাদীর বায়াৎ গ্রহণ করেছেন।
দুটি দল এখন মালয়েশিয়ার সাবাহ কে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছেন। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে সদস্য সংগ্রহ করছেন। তাঁরা মালয়েশিয়ার সাবাহ থেকে ফিলিপাইনের মিন্দানাওয়ের মারাবিতে পৌঁছাচ্ছেন। মারাবি আবু সায়াফ গ্রুপের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
খালিদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত চারজনের দলটির প্রধান ফিলিপাইনের একজন নাগরিক। তিনি মালয়েশিয়ায় ঘড়ি বিক্রির কাজ করেন। তাঁকে সাবাহর কোতা কিনাবালু থেকে ১৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মালয়েশিয়ার একজন নারীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সখ্য গড়ে তোলেন।
২৭ বছর বয়সী ওই নারী ফিলিপাইনের ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেশটির মিন্দানাওয়ের মারাবিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ফিলিপিনো ওই ব্যক্তিই বাংলাদেশের দুই তরুণকে নিয়োগ দেন।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সম্ভাব্য প্রভাব
প্রবাসী শ্রমিকের আইএসে সম্পৃক্ত হওয়ার ঘটনায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কেউ কেউ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব) ইশফাক এলাহী চৌধুরী বেনারকে বলেন এমন ঘটনা বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের ইমেজকে ক্ষুণ্ন করে।
“মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রভাব পড়া অসম্ভব নয়”, ইশফাক এলাহী চৌধুরী বেনার কে বলেন।
তবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি মনে করেন যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁরা এ দেশ থেকে জঙ্গি হয়ে যাননি।
“জঙ্গিবাদ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, এটা মালয়েশিয়া সরকার অবশ্যই বুঝবে”, বেনারকে বলেন নুরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, এর আগে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে সিঙ্গাপুর পুলিশ ২৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায়।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রাপ্তি রহমান।