সাজা ভোগের ২৯ বছর পরে নির্দোষ প্রমাণ
2018.03.21
ঢাকা

সাজা ভোগ শেষ হওয়ার ২৯ বছর পর গরু চোরাচালানের এক মামলায় দুই ব্যক্তিকে খালাস দিয়েছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। যাদের একজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁদের করা আপিলের শুনানি শেষে বুধবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই দুই ব্যক্তিকে খালাস দিয়ে রায় দেন।
আদালতে ওই দুই ব্যক্তির পক্ষে শুনানিকারী সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড- এর প্যানেল আইনজীবী কুমার দেবুল দে বেনারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আবদুল কাদের এবং মফিজুর রহমান নামের ওই দুই ব্যক্তিকে অবৈধভাবে ভারত থেকে গরু আমদানির অভিযোগে এক মামলায় ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের সাজা দেয় বিচারিক আদালত।
“সেসময় ওই দুজনকে যশোর থেকে আটক করা হয়েছিল। এদের মধ্যে মফিজুর তিন বছর আগে মারা গেছেন,” বলেন তিনি।
দেবুল দে বেনারকে বলেন, “ওই দুই ব্যক্তি তিন বছর জেল খেটে ছাড়া পাওয়ার ২৯ বছর পরে আজ নির্দোষ প্রমাণিত হলেন।”
তবে বিষয়টিকে বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও অবহেলার চূড়ান্ত উদাহরণ হিসেবে দেখছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী সালমা আলী বেনারকে বলেন, "উচ্চ আদালতের প্রশাসনিক বিভাগের অদক্ষতাই এর জন্য দায়ী। হয়তো আরও বহু মামলা এমন পাওয়া যাবে।”
“আমরা বলে থাকি-জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড। এক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। যদিও আপিল নিষ্পত্তির ব্যাপারে আসামিদের তৎপরতা না থাকায় এই বিলম্ব হয়েছে, তবু বিচার বিভাগ এর দায় এড়াতে পারে না,” বলেন তিনি।
“এই একটি মামলাই আমাদের বুঝিয়ে দেয় বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতা এখনো কত বড় অসুখ,” বলেন সালমা আলী।
তবে হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন ষাট বছর বয়সী শার্শার আবদুল কাদের।
ওই মামলায় তিন বছর কারাগারে ছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। আর বছর তিনেক আগে এই মামলায় তার সঙ্গী মফিজুর মারা যান বলেও জানান কাদের।
মামলার নথি অনুযায়ী, ভারত থেকে অবৈধভাবে ৬টি গরু আমদানি করার অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে ১৯৮৬ সালের ২৭ আগস্ট যশোরের শার্শা থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস’র (বিডিআর) ল্যান্স নায়ক আমির আলী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। সে বছর যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল তাঁদের পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে তৎকালীন যশোরের হাইকোর্ট বেঞ্চে ১৯৮৭ সালে আপিল করেন তাঁরা। ১৯৮৯ সালে জেলে থেকে মুক্ত হন আবদুল কাদের এবং মফিজুর রহমান।
এরপর বিভাগীয় হাইকোর্ট পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়। যশোরে হাইকোর্টের বেঞ্চ অবলুপ্ত হয়ে ওই আপিল ১৯৯১ সালে ঢাকা হাইকোর্টে স্থানান্তরিত হয়। পরে তাঁরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটি মামলাটির আপিল শুনানির জন্য উচ্চ আদালতে তোলে। মঙ্গলবার মামলাটির শুনানি হয়।
মামলার আপিল শুনানি করতে দুই যুগেরও বেশি সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে আইনজীবী দেবুল দে বেনারকে বলেন, “ওই মামলার আইনজীবী ছিলেন এম এ ওয়াহাব। কিন্তু আপিল করার পর এ মামলার তদবিরকারক আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি। এদিকে পরে ওই আইনজীবীও মারা যান।”
তাঁর মতে, অভিযুক্তরা এই মামলার বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। তাঁরা তা নিষ্পত্তি না করায় মামলাটি গত ২৯ বছর ধরে ঝুলে ছিল।
“এরপর এ বছর জানুয়ারি মাসে উচ্চ আদালত থেকে আবদুল কাদেরকে চিঠি দেওয়া হয় মামলায় আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার জন্য। চিঠিটি পেয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন,” বলেন দেবুল দে।
এরপরেই লিগ্যাল এইড থেকে মামলাটির দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
খালাস পাওয়া আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “হঠাৎ করে গত বছরের নভেম্বর মাসে আদালতের একটি নোটিশ পাই। নোটিশটি পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসে যোগাযোগ করলে আমাকে তাঁরা আইনি সহায়তা দেয়।”