বন্দুকযুদ্ধে নিহত অভিজিতের খুনি শরীফুলকে নিয়ে বিভ্রান্তি
2016.06.22

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ব্যক্তি বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎরায় হত্যা মামলার ‘প্রধান আসামি’ কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রশ্ন তুলে নিহতের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, চার মাস আগে তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছিল।
'শরীফুল' নামে যে আসামি পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে গত শনিবার গভীর রাতে খিলগাঁওয়ে নিহত হয়, তার পারিবারিক নাম মুকুল রানা। পরিবারের দাবি, গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে যশোর শহর থেকে কয়েক ব্যক্তি তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে যশোর সদর থাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
শরীফুলকে হত্যার পর থেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীরা একযোগে বলে আসছিলেন, তার মতো গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে এভাবে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। বরং তার মাধ্যমে জঙ্গিবাদের তথ্য উপাত্ত, পরিকল্পনাকারি ও অর্থদাতাদের বের করা যেত।
‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে সমালোচনার রেশ না কাটতেই প্রশ্ন উঠেছে, আসলে শরীফুল ড. অভিজিৎ হত্যার আসামি ছিল কিনা। অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে পুলিশের ভূমিকা এবং শরীফুল প্রকৃত আসামি কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাফিদা লিখেছেন, পুলিশের নজরদারির মধ্যে খুনিরা বিদেশে চলে যায়। আবার ঢাকায় ঘুরে বেড়ায়। তাদের লোপাট করে দেওয়া হয়। এভাবে এক ঢিলে সব পাখি মারা যায়।
পরিবারের কাছে নিখোঁজ মুকুল রানা গত শনিবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার মেরাদিয়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে তাকে শরীফুল ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী নামে চিহ্নিত করলেও সোমবার তার আসল নাম জানা যায়। শরীফুল পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গির একজন। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে; তাহলে পুরস্কার ঘোষণার আগে থেকে শরীফুল পুলিশের কাছে ছিল কিনা, অথবা পুলিশ তার অবস্থান জানত কিনা।
তবে পুলিশ এসব অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছে। তবে পুলিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব বক্তব্য ও সন্দেহ নিয়ে বক্তব্য দেয়নি।
“আমার ছেলে জঙ্গি কিংবা অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল কি না, তা আমি জানতাম না। যদি জঙ্গিদের সঙ্গে সে জড়িয়ে থাকে, তবে তাকে বিচার করে ফাঁসি দিলে আক্ষেপ থাকত না, বরং খুশি হতাম,” বেনারকে জানান নিহতের বাবা আবুল কালাম আজাদ।
তিনি আরও বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর ছেলে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তা জানতে পারলে নিজেই তাঁকে আইনের কাছে সোপর্দ করতেন। নিজেই বিচারের ব্যবস্থা করতেন।
ওই বাবার মতে, তাঁর ছেলে কোনো অপরাধ করে থাকলে তাকে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে পারতো; কিন্তু বিচার না করে তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত মুকুল রানার বাড়ি সাতক্ষীরার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামে। সে প্রায় চার মাস আগে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। বিয়ের চার দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ পরিবারের।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন জানান, “জগন্নাথপুর গ্রামের আমীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি ২৫ ফেব্রুয়ারি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ২২ ফেব্রুয়ারি মুকুল রানা তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। পরদিন বাড়ি ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হন। তিন দিনেও তাকে খুঁজে না পেয়ে জিডি করা হলো।”
মুকুল ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। প্রথম বর্ষে নিয়মিত ক্লাস করলেও পরবর্তীতে ক্লাসে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এসময় সে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
তার মৃত্যুর খবরে নিহত অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় সান্তনা খুঁজলেও পরে অবস্থান পরিবর্তন করেন। তিনি বলেছিলেন, শরীফুলের নাম তিনি পুলিশের কাছে ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে শুনেছিলেন। সেই শরীফুলের নিখোঁজ থাকা, তার প্রকৃত নাম নিয়ে বিভ্রান্তির ঘটনায় অধ্যাপক অজয় রায় অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।
অজয় রায় গতকাল বেনারকে বলেন, “যে কোন ক্রসফায়ার মানে বিচারবহির্ভূত হত্যা। বিবেকবান মানুষ হিসেবে এটা চাইব না।”
“হত্যাকারীদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলে আমরা সন্তুষ্ট হব। আদালত তার অপরাধের মাত্রা দেখে শাস্তি ঠিক করবে,” জানান প্রবীণ অধ্যাপক অজয় রায়।