জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন মেয়র আনিসুল হক

প্রাপ্তি রহমান
2017.11.30
ঢাকা
171130_Anisul_Haq_620.jpg ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। ছবিটি তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।

চলে গেলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, যিনি একই সঙ্গে রাজনীতি, জনসেবা, ব্যবসা ও সংস্কৃতি অঙ্গনে অনন্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

“আনিসুল হক মেয়র হিসেবে মাত্র দুবছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জনসেবামূলক বিভিন্ন কাজ, শহরের বিভিন্ন এলাকা দখলমুক্ত করা, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে প্রশংসিত হন,” বেনারকে জানান ঢাকা উত্তর সিটির বাসিন্দা আশরাফুল হক, যিনি সরকারি চাকরি শেষে অবসর জীবনযাপন করছেন।

মেয়রের টেলিভিশন চ্যানেল নাগরিক টিভির একজন কর্মী বলেন, “তিনি ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, যাঁর মুখে হাসি লেগে থাকত। তিনি কর্মীদের কথা ভাবতেন।”

বাংলাদেশ সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র (ভেন্টিলেশন যন্ত্র) খুলে নেন। সেখানে গত ১৩ আগস্ট থেকে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আনিসুল হক লন্ডনের স্থানীয় সময় ৪টা ২৩ মিনিটে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। মৃত্যুর সময় তাঁরা পাশে ছিলেন।

ডিএনসিসি গতকাল রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাজ্যে যান মেয়র আনিসুল হক। অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ আগস্ট তাঁকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা।

এরপর তাঁকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে মেয়রের শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ৩১ আগস্ট আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। পরে তাঁকে ওয়েলিংটন হাসপাতালে আনা হয়।

কিন্তু গত মঙ্গলবার মেয়রের শরীরের রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে আবার আইসিইউতে নেওয়া হয়। রক্তে সংক্রমণের পর তাঁর ফুসফুসেও সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে চলে যেতে হয়।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন—এফবিসিসিআই এবং গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন—বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের সংগঠন সার্ক চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত।

একসময় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। আশির দশকে আনিসুল হক বাংলাদেশ টেলিভিশনে জনপ্রিয় উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পান। তার উপস্থাপনায় বিটিভির ঈদের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আনন্দমেলা, রাজনীতি বিষয়ক অনুষ্ঠান মুখোমুখিসহ বেশ কিছু অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়ে তিনি আলোচিত হয়েছিলেন।

১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক। তবে তাঁর শৈশবের একটি বড় সময় কাটে ফেনীর সোনাগাজীর নানার বাড়িতে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ছেলে নাভিদুল হক দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। তাঁর ছোট ভাই আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বর্তমানে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আনিসুল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন।

আগামী শনিবার বেলা ১১টা ৪০মিনিটে আনিসুল হকের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ তাঁর বাসায় নেওয়া হবে। ওই দিন বাদ আসর তাঁকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।