৫৪টি ওয়েবসাইট বন্ধ করল বিটিআরসি

জেসমিন পাপড়ি
2018.12.10
ঢাকা
181210_webportals_1000.jpeg আগে বন্ধ করে দিলেও সন্ধ্যার পরে প্রিয়ডটকম নিউজ পোর্টালটি চালু করে দেওয়া হয়। ১০ ডিসেম্বর ২০১৮।
[বেনারনিউজ]

দেশের ৫৮টি ওয়েবসাইট বন্ধ করা নিয়ে সোমবার রাত পর্যন্ত চলেছে নাটকীয় ঘটনা। প্রথমে সাইটগুলো বন্ধ করে আবার সেগুলো চালু করে দেওয়া হয়। পরে চারটি নিউজ পোর্টাল খুলে দিয়ে মঙ্গলবার রাতে ৫৪ টি সাইট আবার বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

তবে এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

রোববার বিটিআরসি থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (আইএসপি) সংস্থাকে এসব ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বেনারকে বলেন, “সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের পক্ষ থেকে এসব ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা পেয়েছি। এরপর থেকেই ওয়েবসাইটগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়।”

তবে এদিন সন্ধ্যায় একপর্যায়ে বন্ধ করে দেওয়া ওয়েবসাইটগুলো খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার চারটি নিউজপোর্টাল রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। খুলে দেওয়া নিউজপোর্টাগুলো হলো প্রিয় ডটকম, ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর, রাইজিংবিডি এবং শীর্ষনিউজডটকম।

বন্ধ করে দেওয়া ৫৮টি ওয়েবসাইটের বেশিরভাগই নিউজ পোর্টাল। যার অনেকগুলোই সরকার বিরোধী খবর প্রচার করে থাকে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার পর এসব ওয়েবসাইট খুলে দেওয়া হয় বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন।

তিনি বলেন “বন্ধ করে দেওয়া সবগুলো ওয়েব পোর্টাল আজ বিকেল পাঁচটার দিকে খুলে দেওয়া হয়েছে।”

ঠিক কী কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ২০ দিন আগে এসব ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছিল তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি বিটিআরসি।

তবে এর কারণ ‘রাজনৈতিক’ হতে পারে বলে জানান আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক।

তিনি বেনারকে বলেন, “এগুলোর মধ্যে নিউজ পোর্টাল ছাড়া কিছু আছে পার্সোনাল ওয়েবসাইট, কিছু আছে যারা পার্টিকুলার কোনো দলের নিউজ প্রচার করে। এগুলো পলিটিক্যাল কারণেই বন্ধ হয়েছে মনে হচ্ছে।”

“এগুলো সাধারণত বিটিআরসি করে না, প্রধানত করে থাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ন্যাশনাল মনিটরিং কমিটি। তারাই তাদের বিভিন্ন ফাইন্ডিংস বিটিআরসিকে দেয়। বিটিআরসি কোঅর্ডিনেশন করে মাত্র,” বলেন তিনি।

বন্ধের কারণ প্রসঙ্গে বিটিআরসির সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বেনারকে বলেন, “নিরাপত্তাগত কারণে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার পক্ষ থেকে এসব ওয়েব পোর্টাল বন্ধ করতে আমরা অনুরোধ পাই। সেই অনুযায়ী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে বিটিআরসি তার লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়।”

প্রিয় ডটকমের সম্পাদক জাকারিয়া স্বপন বেনারকে বলেন, “আসলে বন্ধ করার কারণ কী- কিছুই আমাদের বলা হয়নি।”

খারাপ দৃষ্টান্ত: বিশ্লেষক

এভাবে হঠাৎ করে ওয়েবসাইট বন্ধ করার ঘটনা খারাপ নজির সৃষ্টি করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। আসন্ন নির্বাচনেও এমন ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. ফাহিমদুল হক বেনারকে বলেন, “বুঝলাম না ওয়েব সাইটগুলো বন্ধ করল যখন, আবার খুলে দিলো কেন? অনুমান করে বলা মুশকিল বিটিআরসি কী চাচ্ছে, সরকার কী চাচ্ছে?”

“এমনিতে তো একটা ঝুঁকি আছে, ভুয়া নিউজ দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা থাকে। সেই সম্ভাবনা এখন বিশ্বের যেকোনো দেশের সামনে নির্বাচনের আগে ঘটে। এ রকম একটা ভয় হয়তো আছে সরকারের সামনে।”

তিনি বলেন, “এই সরকার নির্বাচন বাস্তবায়ন করছে, আবার তারা নিজেরাও এই নির্বাচনে আছে, সুতরাং সাইটগুলো বন্ধ করা বা খুলে দেয়া কার পক্ষে যাচ্ছে বা যাবে কিংবা কার বিপক্ষে যাচ্ছে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তবে ভুয়া নিউজ দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা আশঙ্কার বিষয়।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী আর রাজী বেনারকে বলেন, “এইভাবে পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া বাক স্বাধীনতা চর্চার যে ধারণা আছে তার পরিপন্থী। গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ।”

তিনি বলেন, “এমন আশঙ্কা তো অনেকে করতেই পারে যে, যে পোর্টালগুলো বন্ধ করা হয়েছে সেগুলো সরকারি দল চেয়েছে বলেই বন্ধ করা হয়েছে।”

আলী আর রাজী মনে করেন, “এই ৫৪টি পোর্টালে বেশ কিছু সাংবাদিক কাজ করতেন, এর আয় থেকে তাঁদের জীবীকাও নির্বাহ হতো। কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না দর্শিয়ে, সংশোধনের কোনো সুযোগ না দিয়ে পোর্টালগুলো বন্ধ করে দিলে তাঁদের জীবীকা অর্জনের পথও সাময়িকভাবে রুদ্ধ হয়ে যাবে।”

তাঁর মতে, “বন্ধ করার আগে তাঁদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো কী তা জানানো উচিত ছিল। এরপর তাঁদের সতর্ক করা যেত।”

এদিকে একযোগে দেশের ৫৮টি নিউজপোর্টাল বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানায় সরকারবিরোধী বলে পরিচিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র নেতারা।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিটিআরসিকে দিয়ে ৫৮টি নিউজসাইট বন্ধের ঘটনাকে স্বৈরাচারী, হঠকারী ও ফ্যাসিবাদী পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন এসব সংগঠনের নেতারা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।