সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ আল্লাহর দলের পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তার
2021.02.04
ঢাকা

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’–এর সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ গ্রেপ্তার পাঁচ জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আদালত প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বেনারকে এই তথ্য নিশ্চিত করে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এর পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) এমএম হাসানুল জাহিদ বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতরা কারাবন্দি জঙ্গিদের বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সরবরাহ করত।”
বুধবার সন্ধ্যা ও রাতে রাজধানীর ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয় বলে জানান এটিইউ কর্মকর্তারা।
“গ্রেপ্তারকৃতরা ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ ও চাঁদা আদায় করে আসছিল,” জানানো হয় এটিইউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আল্লার দল নিষিদ্ধ করলেও গ্রেপ্তারকৃতরা “সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা” করত বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
পুলিশের তথ্যমতে, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সংগঠনটির সেকেন্ড ইন কমান্ড শেখ কামাল হোসেন (৩৫), গাজীপুরের বিভাগীয় নায়েক রবি আহমেদ পাপ্পু (২৮), দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান মো. খালেকুজ্জামান (৩৭) এবং মামলা ও কারা দপ্তরের নির্বাহী মো. সোহেল রানা (৪০) ও একই দপ্তরের সহযোগী নির্বাহী মো. মনিরুজ্জামান ওরফে মিলন (৪২)।
তাঁদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন, ভিসা কার্ড ও নগদ ৩৭ হাজার ৬২ টাকা জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নেতা কারাগারে, তবুও সক্রিয়
মতিন মেহেদী ওরফে মতিন মাহবুবের নেতৃত্বে ১৯৯৫ সালে আল্লাহর দল গঠিত হয়। তবে ২০০৪ সালের শেষের দিকে তারা জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সাথে একীভূত হয়।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার পর মতিন নিজের অনুসারীদের নিয়ে জেএমবি ত্যাগ করে আল্লাহর দলকে পুনরায় সংগঠিত করার চেষ্টাকালে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হন।
ওই সিরিজ বোমা হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০০৬ সালে অন্যদের সাথে মতিনকেও মৃত্যুদণ্ড দেয় ঝিনাইদহর একটি আদালত। রায়ে তাঁকে জেএমবির নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
একই ঘটনায় কুড়িগ্রামের আরেকটি আদালত ২০১১ সালে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
মতিন গ্রেপ্তারের পর সংগঠনটি পরিচালনার দায়িত্ব পান ইব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৭)। ২০১৯ সালে ঢাকায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়নের (র্যাব) হাতে আটক হন হিরো। র্যাব জানায়, প্রিজন ভ্যানে হামলা করে কারাবন্দি মতিন মেহেদীকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করছিলেন হিরো।
এটিইউর এসপি (গোয়েন্দা) জানান, সংগঠনটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হাসান ইমাম, যে কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।
কারাগার থেকে মতিন বা হিরোর নির্দেশগুলো হাসানের কাছে বুধবার গ্রেপ্তার কামালের মাধ্যমেই পৌঁছাত বলে জানান তিনি।
পুলিশের তথ্যমতে, আটক কামাল ২০০৪ সাল থেকে সংগঠনটির সাথে যুক্ত। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে কামাল দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
খালেকুজ্জামান ২০০০ সাল থেকে এবং সোহেল ও রবি ২০১৮ সাল থেকে আল্লাহর দলের বিভিন্ন দায়িত্বে যুক্ত বলে জানান তাঁরা।
মিলন কারাবন্দি মতিন মেহেদীর আপন ভাগ্নে। ১৯৯৯ সাল থেকেই তিনি মতিন মেহেদীর একান্ত সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
এদের মধ্যে কামাল প্রাইভেট টিউটর, খালেকুজ্জামান মুদি দোকানি এবং রবি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন বলে বেনারকে জানান এটিইউ কর্মকর্তারা।
মিলন ও সোহেল সংগঠনের কারাবন্দিদের মামলাগুলো দেখাশোনা ও তাঁদের আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। এ জন্য তাঁরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাতা পেতেন বলে জানানা কর্মকর্তারা।
কর্মকাণ্ড থামছে না
প্রতিষ্ঠাতাসহ একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তারের পরও আল্লাহর দলের কর্মকাণ্ড কেন থামছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি জাহিদ বলেন, “এরা সাধারণত অসহায় নিম্নবিত্তদের ‘টার্গেট’ করে। যেহেতু এরা সহিংস বা ধ্বংসাত্মক কাজের চেয়ে ‘দাওয়াতি’ (প্রচারণামূলক) কাজ বেশি করে, সেহেতু সহজ–সরল মানুষ আকৃষ্ট হয়।”
“তবে এরা শক্তি সঞ্চয় করে কিছু একটা যাতে না করতে পারে, এ জন্য তাদের অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। যে কারণে তাদের নেতাদের অনেকেই ধরা পড়েছে,” যোগ করেন তিনি।
“দেখা যাচ্ছে, জঙ্গি সংগঠনগুলোর বড়ো বড়ো নেতারা কারাগারে থাকলেও সংগঠনগুলো নির্মূল হচ্ছে না,” মন্তব্য করে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক বেনারকে বলেন, “জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণের যে প্রক্রিয়া, সেদিকে নজর দিতে হবে।”
তাঁর মতে, “ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া না হলে এটা ঠেকানো সম্ভব নয়।”