জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মসজিদের খতিবসহ এক সপ্তায় গ্রেপ্তার ১১
2021.06.17
ঢাকা

জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত এক সপ্তায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত এগারো জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, গ্রেপ্তার বেশিরভাগই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।
সর্বশেষ বুধবার ভোরে নওগাঁ পৌরসভা সংলগ্ন কাচারি রোড এলাকা থেকে মো. সারোয়ার হোসেন (২৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বেনারকে জানিয়েছেন পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) ওয়াহিদা পারভীন।
“আটক সারোয়ার হোসেন ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনলাইনে উগ্রবাদ প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে সে দীর্ঘদিন নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছিল,” বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন ওয়াহিদা পারভীন।
এর আগে গত ১১ জুন চট্টগ্রাম থেকে সিরিয়া ফেরত জঙ্গি শাখাওয়াত আলী লালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ডে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয় চট্টগ্রাম নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনি মসজিদের খতিব মাওলানা শামীমুর রহমানকে (৪০)।
চট্টগ্রাম পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদ পেয়ার বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান, “রিমান্ডে থাকা জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিরিয়া ফেরত আইটি বিশেষজ্ঞ শাখাওয়াত আলী লালুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাওলানা মোহাম্মদ শামীমুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পুলিশ জানায়, আটক শামীম গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। মসজিদের খতিবের পাশাপাশি তিনি ফিরোজ শাহ মাদরাসার শিক্ষক।
“২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাওলানা শামীমের বাসায় আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। এসব বৈঠকে লালুও থাকত,” জানান আহমেদ পেয়ার।
লালুকে ১১ জুন গ্রেপ্তারের পর আদালত থেকে তাঁকে দুই দফায় মোট ৬ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ১২ জুন সংবাদ সম্মেলনে জানায়, লালু বিভিন্ন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে জিহাদি কার্যক্রম প্রচারের কাজে ‘আইটি বিশেষজ্ঞ’ হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন।
জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে লালু তুরস্ক যান। তুরস্ক থেকে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ায় প্রবেশ করে দীর্ঘ ছয় বছর ‘ইদলিব’ এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে লালু সিরিয়া থেকে তুরস্কে হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় যান। সেখান থেকে শ্রীলংকা এবং পরে আবার ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
কাউন্টার টেররিজমের উপ পরিদর্শক (এসআই) রাছিব খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ২২ মার্চ বাংলাদেশে এসে জঙ্গি সংগঠনের পক্ষে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সন্ত্রাসী কাজ ঘটানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচারের কাজে লালু নিয়োজিত ছিলেন।
যত গ্রেপ্তার
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্প্রতি জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের পরিচালক (মিডিয়া) কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের মতে, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবগুলো ইউনিট সিরিয়াসলি কাজ করায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ পার পাচ্ছে না।”
গত এক সপ্তাহে নওগাঁয় একজন, চট্টগ্রামে দুজন ছাড়াও আরো আটজনের গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য রয়েছে।
১৪ জুন রাজধানীর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ি মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি দল। তাঁরা হলেন, মো. ইলিয়াছ নাহিদ (৪০), নুরুন্নবী ইসলাম (২৫), মো. শাহজালাল (৩৬) ও সামিনুর রহমান সুমন (২৫)।
তাঁরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁদের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ঢাকার একটি আদালত।
গত ১২ জুন রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে আনসার আল ইসলামের দুই সক্রিয় সদস্য মো. জুবায়ের হোসেন (২৭) ও সজীব আহমেদকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ ছাড়া জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততার সন্দেহে গত ১১ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থেকে মুফতি মো. জসিম উদ্দীন তানভীর (২৮) ও ১৪ জুন শেরপুরের নকলা উপজেলায় মো. হাসান মাহমুদকে (১৯) ও গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশি সংখ্যক জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টিকে জঙ্গিবাদের বিস্তার বলে মনে মানতে রাজি নন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ। তাঁর মতে, “এটি সংস্থাগুলোর নজরদারি এবং সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ।”
মসজিদের খতিব শামীমের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকেরই “আদর্শিক সামঞ্জস্য” থাকার কারণে অনেকে জঙ্গিদের ধরিয়ে দেন না, “বরং আশ্রয় দেন। এ কারণে অনেকে গ্রেপ্তার হলেও জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল করা যাচ্ছে না।”