পুলিশ বক্সে হামলা: বোমার কারিগরসহ নব্য জেএমবির দুই সদস্য আটক

জেসমিন পাপড়ি
2021.08.02
ঢাকা
পুলিশ বক্সে হামলা: বোমার কারিগরসহ নব্য জেএমবির দুই সদস্য আটক নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার থানার নোয়াগাঁও এলাকায় নব্য জেএমবির এক সন্দেহভাজন আস্তানা ঘিরে সোয়াতের অভিযান। ১১ জুলাই ২০২১।
[ফোকাস বাংলা]

করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যুর মধ্যেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- শফিকুর রহমান হৃদয় ওরফে বাইতুল্লাহ মেহসুদ ওরফে ক্যাপ্টেন খাত্তাব এবং খালিদ হাসান ভূঁইয়া ওরফে আফনান।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, এদের মধ্যে খালিদ হাসান বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর। গত মে মাসে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় তারা দুজনই জড়িত ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে।

“অফলাইনে এখন জঙ্গিদের তৎপরতা নেই। তারা অনলাইনে সক্রিয়। তবে এটা নিয়ে নগরবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই,” জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, “কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হচ্ছে।”

তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানের ফলে দেশীয় জঙ্গিরা আবারও অনুপ্রাণিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বেনারকে বলেন, “সাম্প্রতিককালে আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানের ফলে দেশীয় জঙ্গিদের মধ্যে একটা নতুন উদ্দীপনা এসেছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশসহ আমাদের উপমহাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ আরো বেশি দেখা যাবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের সমস্ত শক্তি ও মনোযোগ এখন কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধের দিকে। সেই সুযোগে জঙ্গিরা নিজেদের সংগঠিত করছে।”

“তাই এই মহামারির সময়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। ইসলামী বিপ্লবের নামে যেসব প্রপাগান্ডা চলছে সেসব বিষয়ে জনগণকেও সচেতন হতে হবে,” মনে করেন ইশফাক ইলাহী চৌধুরী।


যেভাবে গ্রেপ্তার বোমা কারিগর
সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১১ জুলাই যৌথ অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার নোয়াগাঁও এলাকা থেকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুনকে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াত। তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশের উপর বোমা হামলার ঘটনায় শফিকুর ও খালিদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
“গত ১৬ মে নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় তারা। তবে ত্রুটিপূর্ণ রিমোটের কারণে কয়েকবার চেষ্টা করেও বোমাটি বিস্ফোরিত হয়নি,” বলেন সিটিটিসি প্রধান।

“এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং রিমোটটি রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। পরে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে। এ ঘটনার সঙ্গে আসামি শফিকুর রহমান ও খালিদ হাসান ভূঁইয়া জড়িত ছিল,” বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মাহাদী হাসান জনের নেতৃত্বে শফিকুর রহমান নব্য জেএমবির সামরিক শাখার ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। শফিকুর ও খালিদ বোমা তৈরির অনলাইন প্রশিক্ষক ফোরকানের তত্ত্বাবধানে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কক্ষে বসে হামলায় ব্যবহৃত আইইডি তৈরি করে।
ফোরকান সম্পর্কে সিটিটিসি প্রধান বলেন, “তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল।”
সিটিটিসি প্রধান জানান, গ্রেপ্তারের সময় দুই জনের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ গ্রাম লাল রংয়ের বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ, তিনটি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, এক সেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, ৪ প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ১০টি ক্রিসমাস বাল্ব, দুইটি কালো রংয়ের ইলেকট্রিক টেপ, একটি আইইডি তৈরির ম্যানুয়াল ও হামলায় ব্যবহৃত একটি লাল রংয়ের পালসার মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।

সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপকমিশনার আব্দুল মান্নানের তত্ত্বাবধানে এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী ও এসি মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গ্রেপ্তার শফিকুর ও খালিদকে সোমবার ঢাকার একটি মহানগর হাকিম আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে বিচারক আশেক ইমাম শুনানি শেষে আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে বলে বেনারকে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির উপ-পরিদর্শক বনি আমিন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।