পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণে চার পুলিশসহ আহত পাঁচ
2020.07.29
ঢাকা
ঢাকার পল্লবী থানার ভেতরে বুধবার এক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে আরও দুটি বোমা। বিস্ফোরণে চারজন পুলিশ এবং থানার একজন সাধারণ কর্মচারী আহত হয়েছেন।
চলমান জঙ্গি সতর্কতার মাঝে এ রকম ঘটনা ঘটলেও এটি জঙ্গি সংশ্লিষ্ট নয় বলে মনে করছে পুলিশ। তবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
“এটি জঙ্গি হামলার ঘটনা নয়। অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার তিনজন সন্দেহভাজন অপরাধীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে,” বেনারকে বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন।
“আটক হওয়া সন্ত্রাসীরা ভাড়াটে খুনি। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, তারা পল্লবীর স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট
পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের দায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করেছে বলে বুধবার এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন অনলাইনে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম মনিটার করা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক রিটা কাটজ।
২০১৯ সালের আগস্টের পর ঢাকায় আইএসের এটিই প্রথম হামলা বলে জানিয়েছেন রিটা। তিনি বলেন, ঈদুল আজহার আগে নতুন লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ঢাকায় এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করছে আইএস।
তবে আইএসের এমন দাবি ভিত্তিহীন বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
তিবি বেনারকে বলেন, “অতীতেও এরকম অনেক ঘটনায় আইএস দায় শিকার করেছিল। কিন্তু তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি।”
“যে তিনজন ধরা পড়েছে তাদের অতীতে অপরাধের রেকর্ড আছে, যেগুলো জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট নয়,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবে বিস্ফোরণে আইএসের দায় শিকার আদৌ সত্য কিনা বা তাদের আদর্শের কোনো জঙ্গি গ্রুপের সম্পৃক্ততা এর মধ্যেও আছে কিনা অবশ্যই তা তদন্ত করা হবে।”
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বোমা থানার মধ্যে বিস্ফোরিত হওয়ায় পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন।
তাঁদের মতে, স্থানীয় একটি চক্র অপরাধের সংগঠনের চেষ্টা করার সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তবে ঘটনার এ রকম সরলীকরণের ওপর আস্থা নেই নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। তাঁরা বলছেন, সাধারণ অপরাধীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে খুনখারাবি করলেও সাধারণত এ ধরনের বোমা ব্যবহার করে না।
“গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের কাছে একটি ওজন পরিমাপের যন্ত্র ছিল। ওই যন্ত্রের ভেতর তিনটি বিস্ফোরক পাতা ছিল, যার একটি বিস্ফোরিত হয়েছে। বাকি দুটি বিস্ফোরক পরে নিষ্ক্রিয় করেছে পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল,” বেনারকে জানান পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে পল্লবী থানা-পুলিশের একটি দল দুটি পিস্তল এবং ওজন মাপা মেশিনের মতো একটি বস্তুসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সকাল ৭টার দিকে ওজন মাপার মেশিনের মতো যন্ত্রটি বিস্ফোরিত হয়।
বিস্ফোরণে চার পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- পল্লবী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইমরান (৪৮), এসআই সজীব (৩০), পিএসআই অঙ্কুশ (২৮) এবং পিএসআই রুমি (২৮)।
এ ছাড়া রিয়াজ (২৮) নামে থানার একজন স্টাফ আহত হয়েছেন। রিয়াজের বাম হাতের কবজি বিস্ফোরণে ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় তা কেটে বাদ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বিশ্লেষকদের সন্দেহ
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম. সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, অবস্থা দেখে মনে হয় না পল্লবীর বিস্ফোরণটি সাধারণ সন্ত্রাসীদের কাজ।
তিনি বলেন, “সাধারণ সন্ত্রাসীরা ওজন মাপার স্কেলের মধ্যে বিস্ফোরক স্থাপন করবে এটা সহজে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না।”
“কে তাদের ভাড়া করেছে? যারা ভাড়া করেছে তারা জঙ্গি হলে বিষয়টি অন্যরকম। স্কেলের মধ্যে বোমা, সেই বোমা তারা থানার ভেতর নিয়ে গেল কেন? প্রশ্নগুলোর সমাধান খোঁজা দরকার,” বলেন তিনি।
মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুর রশিদ বেনারকে বলেন, “জঙ্গিদের সক্ষমতা কমে গেছে এটা পরিষ্কার। এ কারণে তারা নতুন কোনো কৌশল করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।”
তিনি বলেন, “পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে বলছে এরা জঙ্গি নয়, সাধারণ সন্ত্রাসী। তবে নিশ্চিত হতে হবে জঙ্গিরা এই সন্ত্রাসীদের ভাড়া করেছে কি না। জঙ্গিরা অনেক সময় সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে। বিভিন্ন দেশে তার নজির আছে।”
জঙ্গি সতর্কতা, গ্রেপ্তার
গত ১৯ জুলাই জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীগুলোর জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দপ্তরের সতর্কতামূলক পত্রে বলা হয়েছে, “বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা ও প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনায় জানা যায় যে, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণত কোনো সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমেই উলায়াত (শাখা) ঘোষণা করা হয়।”
“এমতাবস্থায় ‘নব্য জেএমবি’সহ আইএস মতাদর্শের দেশীয় অনুসারী জঙ্গি সংগঠনগুলো যেকোনো সময়ে সন্ত্রাসী হামলা (আত্মঘাতী) পরিচালনাসহ বোমা হামলার মাধ্যমে বিভিন্ন নাশকতামূলক বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে,” চিঠিতে বলা হয়।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর পল্টন মোড়ে পুলিশের একটি চেকপোস্টের পাশে একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, এটি হাতে তৈরি বোমা বা আইইডি।
সোমবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে র্যাব।
এছাড়া পাঁচ মাস আগে চট্টগ্রামের ষোলোশহরে পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সোমবার কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেদওয়ান ফরহাদ ও তাঁর বড় ভাই রাশেদ খান ওরফে মেননকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।