সিলেটে শাহজালাল মাজারে হামলা চেষ্টা নসাৎ, পাঁচ জঙ্গি আটক

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.08.11
ঢাকা
BD-bomb-suspects_1000.jpg ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় এক সন্দেভাজন জঙ্গি আস্তানায় র‍্যাবের অভিযান। ২৯ এপ্রিল ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজারে বোমা হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে পুলিশ।

কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) পুলিশ স্থাপনা, ধর্মীয় উপসানালয় এবং দূতাবাসসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাতে পারে—গত মাসের মাঝামাঝি পুলিশের এমন সতর্কতা জারির পর এটিই একসাথে সর্বোচ্চ সংখ্যক সন্দেহভাজন জঙ্গি আটকের ঘটনা।

মঙ্গলবার সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নব্য জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর ওই সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আটক করা হয় বলে ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিটের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বেনারকে নিশ্চিত করেছেন।

“আমাদের টিম সিলেটে নব্য জেএমবি’র পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং আরেকজন আরেকটি কলেজের ছাত্র,” বেনারকে বলেন সাইফুল ইসলাম।

সিলেট মেট্রোপলিটান পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া মঙ্গলবার রাতে বেনারকে জানান, “জঙ্গিদের হযরত শাহজালালের মাজারে আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল। আমরা সেটা নসাৎ করে দিয়েছি।”

সাইফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রকে আটক করার পর বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আরও চারজনকে আটক করা হয়।

আটক সন্দেহভাজন জঙ্গিরা জুলাইর শেষে দিকে ঢাকার পল্টনে একটি পুলিশ চেকপোস্টের কাছে বোমা বিস্ফোরণের সাথে জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, “তাঁদেরকে ঢাকায় আনা হচ্ছে।”

গত ২৪ জুলাই রাতে পল্টনের একটি পুলিশ চেকপোস্টের কাছে জনশূন্য স্থানে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।

২০১৬ সালে আইএস অনুসারী নব্য জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের সিরিজ জঙ্গি হামলার পর জুলাইতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে দেশের ইতিহাসে নৃশংস জঙ্গি হামলা চালায় নব্য জেএমবি। ওই ঘটনায় ১৭ বিদেশি এবং পাঁচ জঙ্গিসহ মোট ২৯ জন প্রাণ হারান।

আইএস ওই ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। তবে সরকার দেশে আইএস’র অস্তিত্ব অস্বীকার করে।

ওই ঘটনার পর পুলিশ ও র‌্যাব ছোট বড়ো মিলিয়ে প্রায় শতাধিক জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এতে দুই শতাধিক সন্দেহভাজন জঙ্গি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা প্রাণ হারান বলে জানায় পুলিশ।

কর্মকর্তাদের মতে এইসব অভিজানের ফলে দেশে “জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ে।”

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “হলি আর্টিজান হামলার পর পুলিশের একের পর এক প্রি-এম্পটিভ হামলায় জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ে। তবে ২০১৯ সালে তারা আবার ছোট আকারের চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করে। তারা মূলত পুলিশের ওপর হামলা চালায়।”

তিনি বলেন, “এসব হামলার উদ্দেশ্য হলো তাদের নিজেদের সংগঠিত করা। এবং মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা।”

“এবছর তারা বাংলাদেশে তাদের শাখা খোলার ঘোষণা দিয়েছে। আর সে কারণে পুলিশ সদরদপ্তর কোরবানি ঈদের আগে আইএস হামলার সতর্কতা জারি করে,” বলেন ব্রিগেডিয়ারি সাখাওয়াত।

তাঁর মতে, “জঙ্গিদের হামলার অন্যতম লক্ষ্য হলো পুলিশ। আর তারপরই আমরা দেখলাম পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা। সরকার যাই বলুক এটি জঙ্গি হামলা ছিল।”

গত বছর পুলিশের ওপর বেশ কয়েকটি চোরাগোপ্তা হামলা এবং হামলা চেষ্টার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পল্টন পুলিশ বক্সে বোমা হামলা চেষ্টা অন্যতম।

২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর শক্তিশালী বোমা হামলা হয়। ওই হামলায় ট্রাফিক সিপাহি নজরুল ইসলাম, লিটন চৌধুরী ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্য মো. আশিক আহত হন৷

পরের মাসেই ২৬ তারিখে মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) কার্যালয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা পুলিশের গাড়িতে বোমার বিষ্ফোরণ ঘটলে এসআই রাশেদা খাতুন এবং এক রিকশাচালক আহত হন।

এরপর ২৩ জুলাই ঢাকার পল্টন পুলিশ বক্স এবং খামারবাড়ি পুলিশ বক্সে বিস্ফোরকসহ বোমা পেতে রাখে জঙ্গিরা। বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই চিহ্নিত করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল বোমা দুটি নিষ্ক্রিয় করে।

গতবছর ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের যাত্রাপথে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত এক এএসআই এবং এক সিপাহি আহত হন।

জঙ্গি হামলা মনিটর করা সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ টুইট বার্তার মাধ্যমে জানায় ইসলামিক স্টেট বোমা হামলাগুলো চালায় ও বোমা পেতে রাখে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আইএস’র এই দাবি নাকচ করে দেয়া হয়।

এর ভেতর, চলতি বছর আবার হামলা প্রচেষ্টা হতে পারে বলে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সতর্কতা জারি করে পুলিশ সদরদপ্তর।

সতর্কতা জারির ১০ দিনের মাথায় ২৯ জুলাই ঢাকার পল্লবী থানার ভেতরে ওজন মাপা মেশিন সদৃশ বস্ত বিস্ফোরিত হয়ে কমপক্ষে পাঁচ পুলিশ আহত হন।

তবে পুলিশের মতে, ওই বিস্ফোরণের সাথে জঙ্গিদের কোনো সম্পর্ক নেই, তা সাধারণ অপরাধীদের কাজ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।