অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম: সাত দিনে চার জঙ্গি গ্রেপ্তার

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.12.08
ঢাকা
অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম: সাত দিনে চার জঙ্গি গ্রেপ্তার অভিযান চলাকালে সিরাজগঞ্জে একটি সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার সামনে র‍্যাব সদস্যদের পাহারা। ২০ নভেম্বর ২০২০।
[বেনারনিউজ]

গত সাত দিনে ঢাকা ও দিনাজপুর থেকে পৃথক অভিযানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর ও আল্লাহর দলের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।

অভিযুক্তরা অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিশ্লেষকদের মতে, করোনাভাইরাস মহামারিকালে মানুষ বেশি সময় অনলাইনে সক্রিয় থাকছে। এই সুযোগে তরুণদের মধ্যে উগ্র মতাদর্শ প্রচার করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো।

তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে পদ্ধতিতে জঙ্গিদের ওপর নজরদারি করছে তা যথেষ্ঠ নয়। 

‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ

সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যায় হিযবুত তাহরীরের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট। আটককৃতরা হচ্ছেন; মো. খলিলুর রহমান (২৮) ও মো. ইমরান হাসান (২৫)।

অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁদের ঢাকার বনানী এলাকা থেকে আটক করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হিযবুত তাহরীরের পক্ষে গাজীপুর এলাকার দায়িত্বশীল হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন জানিয়ে এতে বলা হয়, খলিল ও ইমরান ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ‘রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রের’ সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।

এ ছাড়া তাঁরা লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা ও অনলাইন ভিত্তিক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

এদিকে গত ৫ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর এলাকাধীন বিন্নাকুড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে আরেক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আল্লাহর দলের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার আঞ্চলিক প্রধান মো. সুলতান মাহমুদ হাসান ওরফে বড়ো মানিককে গ্রেপ্তার করেছে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।

তাঁর বিরুদ্ধে দিনাজপুর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রয়েছে বলে জানান অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের মিডিয়া অ্যাওয়ারনেস শাখার সহকারী পুলিশ সুপার ওয়াহিদা পারভীন।

এ ছাড়া ২ ডিসেম্বর রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য ও অতীশ দিপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. লুৎফর রহমান জুনায়েদকে (৩১) আটক করে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।

লুৎফর ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। হিযবুত তাহরীরের পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। 

মনিটরিং প্রক্রিয়ায় ‘সীমাবদ্ধতা’ রয়েছে

“অনলাইনে জঙ্গিরা সবসময়ই সক্রিয়” মন্তব্য করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) একে মোহাম্মদ আলী শিকদার বেনারকে বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারিতে মানুষ আরও বেশি অনলাইনে সময় ব্যয় করায় উগ্র মতাদর্শ প্রচারে জঙ্গিরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।”

“তারা মূলত যুবক-যুবতীদের নিশানা বানিয়ে কাজ পরিচালনা করে,” বলেন জেনারেল শিকদার।

তাঁর মতে, “অনলাইন প্লাটফর্মকে বেছে নেয়ার কারণ হলো, এখানে যা ইচ্ছা তাই লেখা যায়, বলা যায়। যেটি মূল ধারার মিডিয়ায় করা যায় না।”

তবে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা ও অনলাইনে নজরদারি বাড়ার কারণে এখন জঙ্গিরা ধরা পড়ছে, যা “একটি আশার দিক,” মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

তবে তাঁর এই মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করে তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা বেনারকে বলেন, “অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম মনিটরিংয়ের বর্তমান ব্যবস্থা জঙ্গিদের আটক করে সাজা দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ নয়।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ভাইরাল হওয়া পোস্ট অথবা বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে। যেমন তাঁরা ‘আল্লাহর দল’ দিয়ে সার্চ করে দেখে কোন কম্পিউটার থেকে অথবা কোন আইপি থেকে এর কার্যক্রম চলছে। সেই অনুসারে তাদের ধরা হয়।”

জোহার মতে, “এই প্রক্রিয়ার একটি সীমাবদ্ধতা আছে। জঙ্গিদের ধরার পর আদালতে দেয়ার মতো কোনো আলামত থাকে না। সে কারণে তাঁদের সাজা হচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম তদারকি করতে হবে আইএসও সনদপ্রাপ্ত বিশেষ সফটওয়ার দিয়ে, যার মাধ্যমে অনলাইনে জঙ্গিদের সকল কার্যক্রমের রেকর্ড বের করে আলামত হিসাবে আদালতে পেশ করা যাবে।”

“এর মাধ্যমেই কেবল তাঁদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে,” বলেন তানভীর হাসান জোহা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।