নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার পরিকল্পনা জেএমবির

জেসমিন পাপড়ি
2018.01.02
ঢাকা
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে গ্রেনেডসহ গ্রেপ্তার নব্য জেএমবির দুই জঙ্গি আশফাকুর রহমান (ডানে) ও রাকিবুল হাসান। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে গ্রেনেডসহ গ্রেপ্তার নব্য জেএমবির দুই জঙ্গি আশফাকুর রহমান (ডানে) ও রাকিবুল হাসান। ০২ জানুয়ারি ২০১৮।
বেনারনিউজ

চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নারী কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের দুই সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানায় পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির দুই সদস্য হলেন মো. আশফাকুর রহমান ওরফে আবু মাহির আল বাঙালি ওরফে রাসেল (২২) ও মো. রাকিবুল হাসান ওরফে সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী ওরফে জনি (১৯)।

এ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান গতকাল শুনানি শেষে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।

গত সোমবার মধ্যরাতে সদরঘাট থানার বালুমাঠ-সংলগ্ন একটি ভবনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ সময় ১০টি গ্রেনেড এবং দুটি সুইসাইড ভেস্ট (আত্মঘাতী বন্ধনী) উদ্ধার করা হয়।

আশফাকুর ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার শিলাশী এলাকার আনিসুর রহমানের ছেলে। রাকিবুল কুমিল্লার মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ নগরপাড় এলাকার জসীম উদ্দিনের ছেলে। পুলিশ বলছে, আশফাকুর নব্য জেএমবির উপ-কমান্ডার আর রাকিবুল সদস্য।

“সদরঘাট থানা ভবনকে আত্মঘাতী বোমা হামলার স্থান হিসেবে বেছে নেয় তাঁরা। সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। ওপরের নির্দেশ পেলেই হামলা চালানো হতো,” বেনারকে জানান কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের প্রধান ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এ এ এম হুমায়ুন কবির।

তিনি বলেন, “পুলিশের মনোবল ভাঙতে হামলার জন্য তাঁরা থানাকে বেছে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। সদরঘাট থানার ওসি নারী হওয়ায় নগরের ১৬ থানার মধ্যে ওই থানাটিকে টার্গেট করে তারা। কারণ, একজন নারীকে ওসি হিসেবে দেখতে চায় না জেএমবি।”

জঙ্গিবাদ বিশ্লেষক নূর খান বেনারকে বলেন, “এ ধরনের মৌলবাদী গোষ্ঠী নারী নেতৃত্বকে মানতে নারাজ। এ কারণেই একজন নারী ওসিকে টার্গেট করেছিল। এতে করে পুলিশের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি নারী সমাজকে ভয় দেখাতে সক্ষম হতো ওরা।”

“তাদের এ ধরনের প্রস্তুতিই বলে দেয় এসব জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী থেমে নেই। দেশের কোথাও না কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ওরা। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব সময় তৎপর থাকতে হবে,” মনে করেন তিনি।

ওসি মর্জিনা আক্তার ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল সদরঘাট থানার ওসির দায়িত্ব পান। চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬ টি থানার মধ্যে একমাত্র নারী ওসি তিনিই। এর আগে একই থানায় ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে ওসি তদন্ত হিসেবে কাজ করেন মর্জিনা।

এই হামলা পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বেনারকে বলেন, “আমি জঙ্গি হুমকিতে মোটেই ভীত নই। বরং আমি কাজ করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।”

এদিকে এই দুই জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে গতকাল দুপুরে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার হাসান মো. শওকত আলী। এ সময় তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদরঘাট এলাকার ওই বাসাটির আশপাশে অবস্থান নেয় পুলিশ।

তিনি জানান, নব্য জেএমবির এক সদস্য সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাসায় ঢুকলে পুলিশ সদস্যরাও সেখানে প্রবেশ করেন। বাড়িটি থেকে তল্লাশি চালিয়ে ১০টি গ্রেনেড ও ২টি সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধার করে পুলিশ। নগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া এ ঘটনায় বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

নিজেদের নব্য জেএমবির আত্মঘাতী সদস্য বলে দাবি করা জঙ্গিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছে বলেও দাবি করেন শওকত আলী।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এম হুমায়ুন কবির জানান, আটক জঙ্গিরা তাঁদের আমিরের নাম ডন (সাংগঠনিক নাম) বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। মেজবাহ নামের একজন তাদের দেখভাল করেন। তারই নির্দেশে দুই মাস আগে চট্টগ্রামে আসে জঙ্গিরা। থানা ভবনের হামলার জন্য তারা কাগজে যে ছক আঁকে, সেটিও হাতে পেয়েছে পুলিশ।

তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে দুই জেএমবি সদস্য জামালপুর ও শেরপুরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা আশফাকুর এবং মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা রাকিবুল মেজবাহের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগ দেয়।”

“পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও এসব জঙ্গিরা অ্যাপসের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করত,” বলেন হুমায়ুন কবির।

“জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের নাম পাওয়া গেছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে,” বলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।

এই নব্য জেএমবির সদস্যরা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশদের হামলার লক্ষ্য নিয়ে আত্মঘাতী হামলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে আটক দুজন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।