রাজধানীতে র্যাবের অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত
2018.01.12
ঢাকা

রাজধানী ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়ায় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের একটি আস্তানায় র্যাবের অভিযানে তিনজন নিহত হয়েছে। নিহত তিনজনই নিষিদ্ধ সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে জানিয়েছে র্যাব।
পুরোনো এমপি হোস্টেলের পেছনে ‘রুবি ভিলা’ নামের ওই ছয় তলা বাড়ির পঞ্চম তলার আস্তানাটি থেকে তিনটি ইম্প্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), বিস্ফোরক জেল ও একটি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বেনারকে জানান, “অভিযানের পর তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। গোলাগুলিতেই তারা নিহত হয়েছে। এরা জেএমবির সদস্য বলে প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে।”
মূল অভিযান শেষ হওয়ার পরে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “নিহত জঙ্গিদের নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনজনেরই বয়স ২৫-২৭ বছরের মধ্যে।”
তবে আস্তানাটিতে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। পরিচয়পত্র দুটিতে ব্যবহৃত ছবি একই রকম হলেও একটিতে নাম লেখা জাহিদ, অন্যটিতে সজীব। সেগুলো জাল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান মুফতি মাহমুদ।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর থেকে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে জঙ্গি দমন করে আসছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সর্বশেষ গত নভেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি ইউনিয়নের পদ্মার চরে র্যাবের অভিযানে তিনজন নিহত হয়। তারাও জেএমবির সদস্য বলে জানিয়েছিল র্যাব।
নতুন পন্থায় বিস্ফোরণের চেষ্টা জঙ্গিদের
বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় অভিযান শুরু করে র্যাব। শুক্রবার ভোরের দিকে জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁদের গোলাগুলি হয়।
“বাড়িটিতে আস্তানা গড়ে বেশ কয়েকজন সক্রিয় জঙ্গি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলাসহ নাশকতার পরিকল্পনা করছে, এমন গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে ছিল। তারই ভিত্তিতে রুবি ভিলার পঞ্চম তলায় অভিযান চালানো হয়,” বেনারকে বলেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
“এ সময় জঙ্গিদের সঙ্গে আমাদের কিছু গোলাগুলি হয়, ওরা কিছু গ্রেনেডও নিক্ষেপ করে,” বলেন তিনি।
র্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ বলেন, “জঙ্গিরা নতুন একটি পন্থা অবলম্বন করেছে। গ্যাস বার্নার অন করে এর ওপর একটি গ্রেনেড রেখেছিল তারা। এটা বিস্ফোরণ হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত।”
তবে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেই র্যাবের অভিযানিক দল গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় তারা সফল হয়নি বলে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রহমত বেনারকে বলেন, “বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দু’টার কিছু পর থেকেই এই এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। সকালে উঠে শুনি র্যাবের অভিযানে তিনজন মারা গেছে।”
মুফতি মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, রাতে কেউ গেট না খোলায় র্যাব সদস্যদের সেটি ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়িটির নয়টি ফ্ল্যাটের ৬০ জন বাসিন্দাকে আগেই নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
র্যাব জানায়, গত ৪ জানুয়ারি কয়েকজন তরুণ রুবি ভিলার পঞ্চম তলার ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। বাড়িমালিক সাব্বির হোসেন বিমানের একজন ফ্লাইট কর্মকর্তা। বাড়িটির কেয়ারটেকার রুবেল ভাড়া দেওয়ার বিষয়টির দেখাশোনা করত।
জঙ্গিদের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার জন্য ওই বাড়ির কেয়ারটেকার রুবেলসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান মুফতি মাহমুদ।
রুবেলের বরাতে তিনি জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর ‘জাহিদ’ নামে এক যুবক এসে পাঁচ তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিতে চায়। নিজেকে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে পরিচয় দিয়ে দুই ভাইকে নিয়ে বাসাটিতে থাকার কথা জানায় সে। সে অনুযায়ী গত ৪ জানুয়ারি প্রথমে একাই বাসায় ওঠেন জাহিদ। ৮ জানুয়ারি আসেন বাকি দুজন।
পঞ্চম তলার ওই ফ্ল্যাটটিতে মোট তিনটি কক্ষ। এর একটিতে তারা তিনজন থাকত। বাকি দুটি কক্ষে আগে থেকেই থাকত আরও চারজন। তবে তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানান মুফতি মাহমুদ।
এদিকে নাখালপাড়ার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বেনারকে বলেন, “গত বছরের ১৪ আগস্টও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই রুবি ভিলায় অভিযান চালিয়েছিল। সে সময় ১০ জনকে আটক করে নিয়ে যায়।
গত বছর (২০১৭) সারাদেশে ২১টি জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত হয় ৪১ সন্দেহভাজন জঙ্গি। এসব অভিযানে অন্তত আটটি শিশু নিহত হয়েছিল। গত বছরের প্রথম অভিযান শুরু হয়েছিল সীতাকুণ্ডের প্রেমতলায়, আর শেষটি ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি ইউনিয়নের পদ্মার চরে। নতুন বছরের প্রথম অভিযান শুরু হলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি ছয়তলা বাড়ি থেকে।