সন্দেহভাজন জঙ্গি তানভীরকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীকে আটক
2020.01.13
ঢাকা

সন্দেহভাজন জঙ্গি মো. তানভীরকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ ঢাকার আশুলিয়া থানার গোকুলনগরের একটি বাড়িতে তিন ঘন্টা অভিযান চালালেও তাঁকে খুঁজে পায়নি। সোমবার রাতের এই অভিযানে কথিত ওই জঙ্গির স্ত্রী শায়লা শারমিনকে (২২) আটক করা হয়।
“ওই বাড়িতে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে—এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছিল। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ওই বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়েছিল,” অভিযান শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার।
পুলিশ সুপার জানান, অভিযান চলাকালে ওই বাড়িতে ড্রোন ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
অভিযান চলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক বেনারকে জানান, একটি দোতলা বাড়ি ঘিরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গকুলনগর বাজারের পাশে সৌদি প্রবাসী আক্তার হোসেন বাড়িটির মালিক।
সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে পুলিশ ও র্যাব অভিযান শুরু করে। দোতলা বাড়িটির নিচতলায় ছিলেন শায়লা শারমিন। তাঁকে বাড়ির ভেতরেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাঁকে থানায় নেওয়া হয়।
অভিযান শেষে রাত সাড়ে আটটায় ওই বাড়ির সামনে ব্রিফিংয়ে মারুফ হোসেন সরদার জানান, “বগুড়া পুলিশের সহায়তায় আমাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এই বাড়িটির সন্ধান পান। এখানে নব্য জেএমবির সদস্যরা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। এই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়।”
পুলিশ জানায়, তাদের লক্ষ্য ছিল নব্য জেএমবির তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) শাখার প্রধান তানভীরকে গ্রেপ্তার করা। তানভীর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনলজি (আইআইটি) বিভাগের শিক্ষার্থী।
জানুয়ারির প্রথম দিকে তানভীর ও শায়লা দম্পতি এই বাড়িটি ভাড়া নেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এখান থেকে নব্য জেএমবির অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো বলে পুলিশ ধারণা করছে।
পাথালিয়া ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লেহাজ উদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তাঁরা দুই তলা বাড়ির পুরোটাই ভাড়া নেন। ওই বাড়িটিতে জঙ্গিরা অবস্থান করছে—গতকাল এই খবর জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।
এদিকে পুলিশের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এর আগেও আশুলিয়ায় আরেকটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন তানভীর। পুলিশ সেখানেও অভিযান চালিয়েছিল, তবে তাঁকে ধরা যায়নি।
মারুফ হাসান সরদার জানান, ‘গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি’ তানভীরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তানভীরের বিষয়ে তথ্য পেতে আটক শায়লা শারমিনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনায় মামলা হবে।
এর আগে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছিল, রাজধানীর উপকণ্ঠে জঙ্গিরা অবস্থান করার মূল করাণ তাদের নিরাপত্তা। বিশেষ করে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা, রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় প্রায়ই জঙ্গিদের উপস্থিতি জানতে পারছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর আগে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সাভারের আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকার চৌরাবালি এলাকায় টিন-শেডের একটি বাড়ি ঘেরাও করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের সদস্যরা। ওই সময় চার জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছিল।
২০১৬ সালের অক্টোবরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পলাশবাড়ি ও বসুন্ধরা হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করা হয়েছিল।
একই বছরের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় বাড়ির পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন জঙ্গি সারোয়ার জাহান। পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে তিনি মারা যান।