এক সহযোগীসহ বর্ধমান বিষ্ফোরণের পলাতক জঙ্গি গ্রেপ্তার

পরিতোষ পাল
2019.01.29
কলকাতা
190129_WB_JMB_622.jpg বর্ধমানের খাগড়াগড়ের ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন পুলিশ ও দমকল কর্মীরা। ৩ অক্টোবর ২০১৪।
[বেনারনিউজ]

ভারতে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম ফেরারি অভিযুক্ত কদর কাজীকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ)। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছে তাঁর সহযোগী সাজ্জাদ আলী (২১)।

তাঁরা দুজনেই ভারতের নাগরিক। কদরের বাড়ি বীরভূমে, আর সাজ্জাদ আলীর মুর্শিদাবাদে।

এনআইএ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, “সোমবার রাতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাথে যৌথ অভিযান চালিয়ে হুগলি জেলার আরামবাগ থানার বড়ো ডেঙ্গাল মোড়ে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে প্রথমে কদর কাজী এবং পরে তাঁর সহযোগী সাজ্জাদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

সংস্থার আইনজীবী শ্যামল ঘোষ বেনারকে বলেন, “মঙ্গলবার এই দুজনকে কলকাতায় এনআইএ-র বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।”

“তারা দুজনই জেএমবির সক্রিয় সদস্য। এর মধ্যে কদর কাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও সে পলাতক ছিল। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল,” যোগ করেন তিনি।

রাজমিস্ত্রির ছদ্মবেশ

এনআইএ-র এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকে তারা দুজনেই ফেরার ছিল। বেশ কয়েকমাস ধরে তারা আরামবাগে রাজমিস্ত্রীর ছদ্মবেশে জেএমবির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল বলে প্রাথমিক জেরায় জানা গেছে।

“কদর কাজী বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সঙ্গেও যুক্ত। হেফাজতে থাকা কওসর ওরফে বোমা মিজানকে জেরা করেই তাঁর হদিস পাওয়া যায়। কওসরের ঘনিষ্ঠ কদর পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির মডিউলেরই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য,” বলেন তিনি।

গত বছরের ১৯ জানুয়ারি তিব্বতি ধর্মীয় নেতা দালাই লামার বিহারের বুদ্ধগয়া সফরের প্রাক্কালে কালচক্র ময়দানের কাছে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়নি। তবে পুলিশ আশপাশ থেকে বেশ কিছু আইইডি উদ্ধার করে।

এর আগে ২০১৪ সালের খাগড়াগড় (পশ্চিমবঙ্গ) বিস্ফোরণ ও ২০১৮ সালের বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের মামলায় বাংলাদেশি কওসরের বিরুদ্ধে ‘লুকআউট নোটিশ’ জারি করা হয়। গত বছরের আগস্টে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে কলকাতা পুলিশ ও পরে এনআইএ তাঁকে হেফাজতে নেয়।

বড় সাফল্যের দাবি

সহযোগীসহ কদর কাজীকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে বড় সাফল্য বলছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, কদর খাগড়াগড় কাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকায় ছিল। অস্ত্র পাচার, বোমার সার্কিট এবং বিস্ফোরক সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল তাঁর।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্ত করতে গিয়েই গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ভারতের তিন রাজ্যে কীভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করে জিহাদি কার্যক্রম চালাচ্ছে জেএমবি।

আদালতে পেশ করা এনআইএ-র অভিযোগপত্রে বলা হয়, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রেই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনটির ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। জেএমবি প্রথমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ঝাড়খণ্ডে ঘাঁটি তৈরি করে এবং পরে তা অন্য আরও কয়েকটি রাজ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, খাগড়াগড়ের একটি দোতলা বাড়িতে গোপনে বোমা তৈরির সময়ে আচমকাই বিস্ফোরণ ঘটে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবরের সেই বিস্ফোরণে দুই জেএমবি জঙ্গি শাকিল গাজি ও করিম শেখ নিহত হয়। আহত হয় আরো একজন।

তখন ঘটনাস্থল থেকে গুলসোনা বিবি এবং আলিমা বিবি নামে দুই মহিলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে এনআইএ জানায়, তাঁরা দুজনই জেএমবির প্রশিক্ষিত নারী বাহিনীর সদস্য।

অধরা পাঁচ জঙ্গি

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত ৩৩ জনের মধ্যে ২৫ জন বর্তমানে ভারতের কারাগারে এবং একজন বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছে। এছাড়া কওসর ও কদর কাজী রয়েছে এনআইএ-র হেফাজতে। তবে পাঁচজন আজও অধরা রয়ে গেছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে ১১ জনই বাংলাদেশের নাগরিক। তদন্তকারীদের মতে, তাঁদের অনেকেই জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা।

ইতিমধ্যে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নির্মল দত্ত বেনারকে বলেন, “এখনো খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত অনেক জেএমবির মাথা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গিয়েছে। এদের ব্যাপারে সক্রিয় নজরদারি জারি রাখা জরুরি।

“বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালানোর ফলে জেএমবি জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গসহ আশপাশের রাজ্যগুলোয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।