বিহারে দালাই লামার অনুষ্ঠানস্থলে হামলার অভিযোগে নব্য জেএমবির দুই সদস্য গ্রেপ্তার
2018.02.02
কলকাতা

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতন ও গণহত্যার প্রতিশোধ নিতেই বিহারের বুদ্ধগয়ায় গত মাসে তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার সফরের সময় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে ধৃত সন্দেহভাজন নব্য জেএমবির (জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) দুই ভারতীয় জঙ্গির বরাত দিয়ে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) প্রধান মুরলিধর শর্মা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
“ধৃতরা স্বীকার করেছে যে, তারা বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে একটি বোমা ফাটলেও অন্যটি ফাটেনি,” বলেন শর্মা।
গত ১৯ জানুয়ারি বুদ্ধগয়ায় কালচক্র ময়দানের ঠিক বিপরীতে একটি চায়ের দোকানে রাখা বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। তবে এই বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়নি। বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগেই সেই ময়দানে তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামা ভাষণ দিয়েছিলেন। পুলিশ তল্লাশি অভিযানে পরের দিন আরও দুটি বোমা উদ্ধার করেছিল।
তবে দালাই লামার ওপর জঙ্গিদের আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল কি না সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।
এসটিএফ প্রধান শর্মা শুক্রবার বেনারকে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে দুইটি জেলায় নব্য জেএমবি স্লিপার সেল তৈরির চেষ্টা করছে জানার পর গত কয়েক দিন ধরে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুজনকে চিহ্নিত করা হয়। সেই দুজনকে পশ্চিমবঙ্গের দুই জেলা থেকে এসটিএফ গ্রেপ্তার করেছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, মুহম্মদ পয়গম্বর শেখ (২৪) নামে সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জ থেকে এবং জমিউল শেখ (৩১) নামে আরেক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দার্জিলিং জেলার ফাঁসি দেওয়া থেকে।
ধৃতদের কাছ থেকে ৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ, ল্যাপটপ, কিছু বুকলেট, মোবাইল ফোন ও গ্লাভস পাওয়া গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে নব্য জেএমবি (জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) মডিউলের অন্য সদস্যদের খোঁজে ধৃত দুজনকে সঙ্গে করে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় জোর তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় আদালত বৃহস্পতিবার ধৃত দুজনকে ১৪ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে নব্য জেএমবির অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিতে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে গেছে বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই গ্রেপ্তারের কথা ইতিমধ্যেই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএকে জানানো হয়েছে। এনআইএ বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের তদন্ত করছে।
এনআইএ-র এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার সূত্রে বেনারকে বলেন, তারা খুব শিগগিরই ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
দুই জঙ্গিই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা
দুই জঙ্গির বাড়িই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার শামসেরগঞ্জে। পয়গম্বর শেখ পুলিশকে জানিয়েছে, তিনি শামসেরগঞ্জের কলোনিপাড়া মসজিদের ইমাম ছিলেন। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় আরবি ভাষার শিক্ষকও ছিলেন। পাশাপাশি আতরের ব্যবসাও ছিল তাঁর। পয়গম্বরের সহযোগী জমিরুলের ছিল পশু খাদ্যের ব্যবসা।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে, পয়গম্বর ২০১২-১৩ সালে বাংলাদেশি বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হাতকাটা নাসিরুল্লার কাছে বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এ ছাড়া কিছুদিন আগে পর্যন্তও জেএমবির শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।
নাসিরুল্লাহ ও সালাউদ্দিন ২০১৪ সালের পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম পুরস্কার ঘোষিত আসামী।
পুলিশ জানিয়েছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে সেই সময় এনআইএ পয়গম্বরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। তবে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে নব্য জেএমবির মডিউল
পশ্চিমবঙ্গে যে নতুন করে নব্য জেএমবির মডিউল তৈরির চেষ্টা চলছে তা দুই ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তবে এই মডিউলের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে, বলেন শর্মা।
জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা দাবি করেছে, নব্য জেএমবির হয়ে তারা পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করছিল। দুজনই ভারতের নানা জায়গায় ঘুরেছে।
পশ্চিমবঙ্গের একটি কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক বিজয় দত্ত বেনারকে বলেন, “খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরই আমরা জানতে পেরেছিলাম যে পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি ঘাঁটি তৈরি করেছে। তবে ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা যে চুপ করে বসে নেই সেটা আবারও প্রমাণ হলো।”
ভারতের ইনটেলিজেন্স ব্যুরো আইবি-র সাবেক কর্মকর্তা নির্মল দত্ত বেনারকে বলেন, “ভাষা ও পরিবেশগত সাদৃশ্য থাকায় এখানে সহজেই গোপন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। আর মাদ্রাসার আড়ালেই এটা বেশি করে হচ্ছে।”
“বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালানোর ফলে বহু বাংলাদেশি জঙ্গি এপারে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এরাই মূলত স্থানীয় ভারতীয়দের নিয়ে জঙ্গি মডিউল তৈরির ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে”, বলেন তিনি।