নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক গুরু মাওলানা কাশেম গ্রেপ্তার
2017.03.03
ঢাকা

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলাকারী সংগঠন নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক গুরু মাওলানা মো. আবুল কাশেমকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তবে শুক্রবার আবুল কাশেম আদালতকে বলেন, হলি আর্টিজান হামলার আগে গত বছরের মে মাসে তাঁকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। এ সময় তিনি আদালতকক্ষে থাকা জিয়াউল হক নামের এক আইনজীবীকে দেখিয়ে বলেন, ডিবি কার্যালয়ে থাকার সময় ওই আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল।
যোগাযোগ করা হলে আইনজীবী জিয়াউল হক ডিবি কার্যালয়ে কাশেমের সাথে দেখা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে স্ত্রীসহ তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি সেলে কাশেমের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। পরে অবশ্য কোনো মামলা ছাড়াই স্ত্রীসহ জিয়াউলকে ছেড়ে দেয় ডিবি।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ আবুল কাশেম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে। সেখানে মে মাসে আটকের বিষয়ে আবুল কাশেমের দাবির প্রসঙ্গটি ওঠে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে এই দাবি মিথ্যা ও অবাস্তব বলে মন্তব্য করেন।
“আসামিরা তো অনেক কথাই বলে। তাদের কথা অনেক ক্ষেত্রেই গ্রহণ করা যায় না। গতকাল রাতেই তাঁকে ধরা হয়েছে,” বলেন মনিরুল ইসলাম।
জঙ্গি দমনে সফল হওয়ায় বাংলাদেশের পুলিশকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। তবে প্রায়ই আসামিদের আগে ধরে পরে হাজির করার অভিযোগ উঠছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান এই প্রবণতাকে ‘ভয়ংকর’ বলে মন্তব্য করেছেন।
“এই প্রবণতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থা ও মামলার মেরিট নষ্ট করে,” বেনারকে বলেন নূর খান।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ২ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে সিটির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের দুটি দল রাজধানীর সেনপাড়া পর্বতা থেকে আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুরকে গ্রেপ্তার করে।
কাশেম দিনাজপুরের রানির বন্দর এলাকার একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল। বিকাশে তার কাছে কিছু টাকা আসার কথা ছিল। ওই টাকা নিতেই সে সেনপাড়া পর্বতায় গিয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে আটক করে।
“২০১৩ সালের শেষভাগে বা ২০১৪ সালের শুরুর দিকের কোনো এক সময়ে মো. আবুল কাশেম বৈঠক করে তামিম চৌধুরীর সঙ্গে। সে সময় থেকেই নব্য জেএমবির জঙ্গি কার্যক্রম শুরু,” সাংবাদিকদের জানান মনিরুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, আবুল কাশেমের পরিবার জেএমবির সঙ্গে যুক্ত। মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সে দলের হাল ধরে। নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের একপর্যায়ে জেএমবি ভেঙে যায়। নতুন অংশের নেতৃত্বে আসে আবুল কাশেম।
আলোচনায় কাশেম ও তামিম
মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেএমবির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। জেএমবির একটি অংশ সাইদুরকে নেতা মানতে রাজি হচ্ছিল না। তারা নজরুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসককে নেতৃত্বে নিয়ে আসে। নজরুল খুন হওয়ার পর আধ্যাত্মিক গুরুর পদ পায় মাওলানা কাশেম।
মনিরুল বলেন, ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে আসে। ওই বছরের শেষভাগে বা ২০১৪ সালের শুরুতে মাওলানা কাশেম ও তামিমের মধ্যে রাজশাহীতে বৈঠক হয়। বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা পুলিশকে এ বিষয়টি অবহিত করে। তবে সে সময় তামিম চৌধুরী কে বা কী উদ্দেশ্যে সে বাংলাদেশে এসেছে তা পুলিশ জানতে পারেনি।
“তামিমের নামটা সেভাবে আমরা জানতাম না। শুধু জানা গেছে, সে কানাডীয় সিটিজেন,” জানান মনিরুল।
তিনি বলেন, সাদিক নামে একজনকে ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যার পর আমরা গ্রেপ্তার করি। সে জানায়, দুজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি তার ওখানে ছিল—একজন সামিউন ও আরেকজন কানাডীয়। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি তামিমকে শনাক্ত করা হয়।
মাওলানা কাশেমকে দলে ‘বড় হুজুর’ বলে সম্বোধন করা হয় এবং সে যে নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক গুরু তা পুলিশ জানতে পারে বেশ পরে।
পুলিশ বলছে, মাওলানা আবুল কাশেম বক্তৃতা–বিবৃতি দিয়ে হত্যাকাণ্ডকে ‘জাস্টিফাই’ করেছে। সে হিসেবে অপরাধের ফৌজদারি দায় তাঁর ওপর বর্তায়। তবে এখন পর্যন্ত হলি আর্টিজানে হামলার দায় মাওলানা কাশেম স্বীকার করেনি।
গুলশান হামলার অভিযোগপত্র বছর শেষে
এখন পর্যন্ত গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় ২০/২২ জনের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে হামলায় জড়িতদের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন হতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
হলি আর্টিজানে হামলাকারী পাঁচজনসহ ১৭/১৮ জন এরই মধ্যে নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে হামলাকারী পাঁচজন ছাড়াও আছে তামিম, সারওয়ার, তানভীর কাদেরি, মারজান, জাহিদ, তারেক, আবদুল্লাহ ও ফরিদুল ইসলাম আকাশ। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আছে কল্যাণপুর থেকে গ্রেপ্তার রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম (রাজীব গান্ধী) ও বড় মিজান।
হামলায় জড়িত সন্দেহে খোঁজা হচ্ছে, সোহেল মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র্যাশ (কল্যাণপুর থেকে অস্ত্র নিয়ে হামলাকারীদের পৌঁছে দিয়েছিল), বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, মুসাসহ আরও দুজনকে।
অভিযোগপত্র দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন—জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, পুলিশ শতভাগ নিশ্চিত হয়ে অভিযোগপত্র দিতে চায় বলে দেরি হচ্ছে।