চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার
2017.03.08
ঢাকা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক জঙ্গির বাসা থেকে ২৯ টি গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। বেশ কিছুদিন বিরতির পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আবারও একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেল।
এ প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার বলেছেন, “জঙ্গি নির্মূল হয়নি, নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। এরা বসে থাকবে না, এরা মাঝেমধ্যেই আত্মপ্রকাশ করবে।”
গত মঙ্গলবার কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলার সময় আটক হয় দুই জঙ্গি জসীমউদ্দিন ও হাসান। একদিন পর চট্টগ্রামে তাঁদের ভাড়া করা বাসায় অভিযান চালিয়ে এই ২৯টি গ্রেনেড উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘রিদওয়ান ভবন’ নামের ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গ্রেনেড উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট চট্টগ্রাম জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে অভিযান শুরু করে।”
ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের সাংবাদিক আসিফ সিরাজ বেনারকে জানান, “বাড়িটি থেকে পুলিশ ২৯টি গ্রেনেড, ৭টি কালো পাঞ্জাবি, আরবি অক্ষরে লেখা কালো রঙের একটি ব্যানার, ৯টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও ৪০ প্যাকেট জেল উদ্ধার করা হয়েছে।”
অভিযানের পরে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “জঙ্গিরা বাড়িটি ভাড়া নিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য আস্তানা গড়েছিল। সেখানে অবস্থানকারী আটজন জঙ্গির নাম পাওয়া গেছে।”
এ বিষয়ে বাড়ির মালিক রিদওয়ান উদ্দিন বেনারকে বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁরা বিল্ডিংয়ের দুই তলায় একটি ইউনিট ভাড়া নিয়েছিল। শিশুসহ এক নারী এবং দুজন পুরুষ বাসাটি ভাড়া নেন। কামাল এবং মাহমুদ নামে জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে ওই দু’জন কাপড়ের ব্যবসা করেন বলে জানিয়েছিল।”
আটক জঙ্গিরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
কুমিল্লায় পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করা বোমাগুলো নিজেরাই তৈরি করেছে বলে স্বীকার করেছে আটক দুই জঙ্গি। পুলিশের মতে, তাঁরা এক্সক্লুসিভ ডিভাইস তৈরিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বুধবার সাংবাদিকের বলেন, “এযাবৎ যত বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, তার মধ্যে গতকাল উদ্ধার হওয়া ছয়টি বোমা সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল । এগুলো বদ্ধ ঘরে ফাটানো হলে সবকিছু উড়ে যেত।”
বোমা তৈরিতে তাঁদের অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বুধবার চান্দিনা থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে।
নতুন তৎপরতা দৃশ্যমান
গত চার বছর ধরে জঙ্গিদের হাতে বিদেশি নাগরিক, ব্লগারসহ ভিন্নমতাবলম্বীরা নিহত হয়েছেন। গত বছরের ১ জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলায় হতাহতের ঘটনায় জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় হানা দিয়ে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে। বেশ কয়েকজন জঙ্গি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এ অবস্থায় জঙ্গিরা খানিকটা দমে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু কিছুদিনের বিরতিতে এক সপ্তাহেই পরপর দুদিন হামলা চালিয়েছে তাঁরা।
গত সোমবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানকে বহনকারী পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ার সময় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলা হয়।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অভিযানের সময় পুলিশের ওপর হামলা চালায় নব্য জেএমবির সদস্যরা। অভিযানে আটক জঙ্গি আজিমুল ইসলাম পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে মারা যায়।
আইএস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা
২০০৪ সালে হজরত শাহজালালের মাজারের সামনে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। সম্প্রতি সে রায় প্রকাশিত হওয়ার পর এই জঙ্গিনেতার ফাঁসি আসন্ন ধরেই জঙ্গিরা মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
এ ছাড়াও ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস-এর খেলাফত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে আসাকে বাংলাদেশে নতুন জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করছেন মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুর রশিদ।
বেনারকে তিনি বলেন, “আইএস এর খেলাফত বর্তমানে উৎখাতের পর্যায়ে। মসুলও তাদের হাতছাড়া হতে চলেছে। সুতরাং তাঁদের জায়গা থাকছে না। এই অবস্থায় তারা বিভিন্ন দেশে তাদের মতাদর্শীদের অ্যাক্টিভেট করার জন্য সচেষ্ট হতে পারে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে।”
এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “শঙ্কা থাকলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সফলতার সঙ্গেই কাজ করছে।”
এদিকে ২০০৪ সালে হজরত শাহজালালের মাজারের সামনে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত। তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
মুফতি হান্নান রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও এ রকম রিভিউ গ্রহণের নজির খুব একটা দেখা যায় না বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
“এরপরে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারে। সে আবেদন খারিজ হলে ৭ দিন পর এবং ২১ দিনের মধ্যে দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে,” বেনারকে বলেন মাহবুবে আলম।
জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
গাজীপুরে প্রিজনভ্যানে এবং কুমিল্লা ও রাজশাহীতে পুলিশের ওপর জঙ্গিদের হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করে জঙ্গিবাদ নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সবাই যখন জঙ্গিদের ভয়ে তটস্থ তখন আমরা মাথা উঁচু করে বলেছি যে, আমরা পেরেছি। আমরা নির্মূল করতে পারিনি কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।”
তিনি বলেন, “এরা মাঝেমধ্যেই আত্মপ্রকাশ করবে। তবে বেশি দূর এগোতে পারবে না।”