নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলায় নিহতদের তিনজন বাংলাদেশি
2019.03.15
ঢাকা

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান ভুঁইয়া।
এ ঘটানয় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া গোলাগুলির ঘটনার পর থেকে এক বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় একজন বন্দুকধারী এই হামলা চালায়।
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. সুফিউর রহমান বেনারকে বলেন, “আহতদের মধ্যে আরো বাংলাদেশি থাকতে পারে। তবে সে দেশের পুলিশ সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না।”
ওই হামলায় নিহত বাংলাদেশিরা হলেন: স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ এবং তাঁর স্ত্রী সানজিদা আকতার। এছাড়া হোসনে আরা ফরিদ নামেও অন্য এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তিনি গৃহবধূ ছিলেন।
ড. সামাদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভার মধুর হাইল্যা গ্রামে। নিউজিল্যান্ডে সামাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি আল নূর মসজিদের মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন বলে বেনারকে জানান তাঁর ছোট ভাই হাফেজ হাবিবুর রহমান।
ক্রাইস্টচার্চে যে দুটি মসজিদে হামলা করা হয়েছে তার একটি হলো এই আল নূর মসজিদ।
নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে অত্যন্ত ভয়াবহ এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ নিহত বলে জানিয়েছেন দেশটির পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ।
এ ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক শোকবার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার ফিরছে ক্রিকেটাররা
এই ভয়াবহ হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের জরুরি ভিত্তিতে দেশে আনা হচ্ছে। ওই হামলার পর নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তৃতীয় ও শেষ টেস্ট বাতিল করা হয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় নিউজিল্যান্ড থেকে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাদের।
জানা যায়, যে দুই মসজিদে হামলা করা হয়েছে তার একটি আল নূর মসজিদ। বাংলাদেশ দল যেখানে অনুশীলন করছিল, সেই হ্যাগলি ওভালের কাছে হওয়ায় সেখানে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। তবে কয়েক মিনিট দেরিতে পৌঁছানোর কারণে ভয়াবহ ওই হামলা থেকে রক্ষা পান তারা।
যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, বর্তমানে বিশেষ নিরাপত্তায় আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
মন্ত্রী বলেন, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের কোনো মিশন নেই। তবে নিউজিল্যান্ডের রাজধানী অকল্যান্ডে আমাদের একজন অনারারি কনস্যুলার রয়েছেন। তিনি সার্বক্ষণিক বাংলাদেশিদের বিষয় তদারকি করছেন। ঘটনার পর নিউজিল্যান্ড সরকার সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ায় ক্রাইস্টচার্চে তাঁর পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। আগামীকাল সকালের মধ্যে তিনি পৌঁছে যাবেন৷
মন্ত্রী জানান, অষ্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ঘটনার তদারকি করছেন। ক্যানবেরা থেকে দুজন কর্মকর্তা নিউজিল্যান্ডে রওনা দিয়েছেন।
সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্থানীয় পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দুই মসজিদে হামলায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করেছে নিউজিল্যান্ডের পুলিশ। এদের তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী।
হামলাকারী ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, সন্দেহভাজন হামলাকারী একজন চরম ডানপন্থি নৃশংস সন্ত্রাসী।
হামলার পরে পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত নগরীর সব মসজিদ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চ কর্তৃপক্ষ। সেখানকার সব স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই জঘন্য হামলার নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল আর. পম্পেও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এই ঘৃণ্য হামলার নিন্দা জানাচ্ছে। এই কঠিন সময়ে আমরা নিউজিল্যান্ডের জনগণের পাশে আছি।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো ধরনরে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।