প্রাণভিক্ষা চাইবেন মুফতি হান্নান

জেসমিন পাপড়ি
2017.03.22
ঢাকা
হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। ২৩ জুন, ২০১৪।
STR/AFP

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার এক সহযোগী। তাঁর অন্য সহযোগী সিদ্ধান্ত জানাবেন পরে।

সাংবাদিকদের এমনটিই জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

এদিকে এই তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একই সাথে যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছে ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন।

২০০৪ সালে সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আব্দুল হান্নানসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। পরে হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে। ওই ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতসহ ৪০ জন।

প্রাণভিক্ষা চাইবে জঙ্গিরা

মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জঙ্গির মধ্যে মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। আর সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে অন্য আসামি দেলোয়ার ওরফে রিপনকে। মঙ্গলবার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজের সত্যায়িত অনুলিপি কারাগারে পৌঁছালে বুধবার সকালে তা আসামিদের পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে জানা যাবে।”

সিলেটের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. সফিউল্লাহ বলেন, “রিপনকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। তবে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার পর প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন তিনি।”

কারাবিধি অনুযায়ী রায় শোনানোর সাত দিনের মধ্যে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে হবে আসামিদের। সে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে সরকারের নির্ধারিত সময়ে দণ্ড কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে এইচআরডব্লিউ ও যুক্তরাজ্য

এদিকে মুফতি আব্দুল হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি যে কোনো দেশে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে বলে বুধবার বিবৃতিতে জানায়।

বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেছেন, “অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ করে ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ।

এইচআরডব্লিউ দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি হামলাগুলোর ঘটনায় জড়িতদের বিচারে সমর্থন দিয়ে আসছে জানিয়ে ব্রাড অ্যাডামস বলেন, “কিন্তু আমরা বারবার বলে আসছি এসব বিচার অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে এবং বাংলাদেশকে মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

স্বীকারোক্তি দেওয়ার আগে আসামি মুফতি আব্দুল হান্নানকে ৭৭ দিন এবং অন্য দুই আসামিকে ৪০ দিন করে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ সময় তাদের পক্ষে আইনি প্রতিনিধি দেওয়া হয়নি এবং স্বীকারোক্তিগুলোও সেসময়ই নেওয়া হয়েছে।

পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অনেক অভিযোগই বাংলাদেশের অনেক আদালত গ্রহণ করেছে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রায়শই এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করে থাকে বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ তুলেছে এইচআরডব্লিউ।

তবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারের মাধ্যমে হান্নানকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে দাবি করে এইচআরডব্লিউর এই অবস্থানের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনার কাজী রিয়াজুল হক।

তিনি বেনারকে বলেন, “যেখানে সারা বিশ্ব আজ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে এক হয়ে গেছে, সেখানে এইচআরডব্লিউ’র এই আবেদনের অর্থ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। এ বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি না।”

অন্যদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের রায় হলেও যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিপক্ষে বলে জানিয়েছে ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন।

এক ই-মেইলে দেওয়া জবাবে হাইকমিশন বেনারকে জানায়, সিলেটের দরগা-ই-শাহ জালালে হামলা ছিল অত্যন্ত জঘন্য ঘটনা। এই ধরনের সন্ত্রাসী অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। তবে যুক্তরাজ্য সকল পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে তার দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।