হলি আর্টিজান হামলার অস্ত্র সরবরাহকারী সাগর গ্রেপ্তার

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.03.22
ঢাকা
ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে গুলশানের হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানে কফিন বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে গুলশানের হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানে কফিন বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। ৪ জুলাই ২০১৬।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগরকে গ্রেপ্তার করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ।

একই সঙ্গে গত বছর রাজধানীর পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আত্মঘাতী বোমা হামলার মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত নব্য জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গি আকরাম হোসেন নিলয়কেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া।

“বগুড়া জেলা পুলিশ ২১ মার্চ রাত একটা ৩০ মিনিটের দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার নীলা সিনেমা হলের কাছ থেকে হাদিসুর রহমান সাগর ও আকরাম হোসেন নিলয়কে গ্রেপ্তার করেছে,” বেনারকে বলেন পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া।

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হাদিসুর রহমান সাগর (বামে) ও আকরাম হোসেন নিলয় এর ছবি।
বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হাদিসুর রহমান সাগর (বামে) ও আকরাম হোসেন নিলয় এর ছবি।
নিউজরুম ফটো
গ্রেপ্তারের পর তারা নব্য জামাআতুল মুজাহিদীনের দুই জঙ্গিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের ঢাকায় আনা হয়েছে বলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বেনারকে নিশ্চিত করেছেন।

গতকালই সাগরকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাগরকে ১০দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। ঢাকার মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলাম সাত দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।

“হাদিসুর রহমান সাগর ও আকরাম হোসেন নিলয় বগুড়ায় নীলা সিনেমা হলের সামনে অপেক্ষা করছিল। তারা হয়তো অন্য কোনো স্থানে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছিল,” বেনারকে বলেন পুলিশ সুপার ভূইয়া।

তিনি বলেন, “সাগর হলি আর্টিজান হামলায় ব্যবহৃত একে-২২ রাইফেল ও গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। আর নিলয় গত বছর ১৫ আগস্ট পান্থপথের বোমা হামলার মূল হোতা। এদের দুইজনকেই পুলিশ খুঁজছিল।”

যে স্থানে সাগর ও নিলয়কে গ্রেপ্তার করা হয় সেখানকার একটি শিয়া মসজিদে নব্য জেএমবির সদস্যরা হামলা চালিয়ে মুয়াজ্জিনকে হত্যা করে বলে জানান পুলিশ সুপার।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডে অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি সংগঠন নিও-জেএমবির পাঁচ জঙ্গি অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ তিন বাংলাদেশি নাগরিককে প্রথমে জিম্মি করে ও পরে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ওই হামলায় নয় ইতালীয়, সাত জাপানি, একজন ভারতীয় ও তিন বাংলাদেশি প্রাণ হারান। জঙ্গিদে আক্রমণে দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন।

নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন, ইশরাত জাহান আখন্দ ও অবিন্তা কবির বাংলাদেশের নাগরিক। হামলায় নিহত একমাত্র ভারতের নাগরিক হলেন তারিশি জেইন।

পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানে ওই পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। কমান্ডো অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে রাতে আইএস মিডিয়া আক্রমণকারী ওই পাঁচ জঙ্গির ছবিসহ তাদের নাম প্রকাশ করে এবং ওই পাঁচ আক্রমণকারীকে তাদের ‘সৈনিক’ বলে দাবি করে।

হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের মিডিয়ায় সর্বপ্রথম জানানো হয়। হলি আর্টিজানের দুজন কর্মচারীও নিহত হন। পাঁচ জঙ্গিসহ সব মিলিয়ে হলি আর্টিজান হামলায় ২৯ জন নিহত হন।

ওই পাঁচ আক্রমণকারীরা হলো; নিবরাজ ইসলাম, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

হলি আর্টিজান হামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হ‌ুমায়ূন কবির বেনারকে বলেন, হামলার সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজন এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাই তিনি হামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারছেন না।

তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ২২জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। হাদিসুর রহমান সাগরসহ মোট সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছে। আর দুজন পলাতক রয়েছে।

বোমা তৈরির কারিগর সাগর, নিলয় অর্থদাতা

পুলিশ সূত্র জানায়, সাগর শায়খ আব্দুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত পুরোনো জেএমবি’র সদস্য। ইরাক-সিরিয়া ভ্রমণ করে আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর হাত ধরে ২০১৪-১৫ সালে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয় সাগর।

ইসলামিক স্টেটের কট্টর আদর্শে বিশ্বাসী নব্য জেএমবিতে সে বোমা তৈরির কারিগর হিসেবেও পরিচিত ছিল। গত মাসে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা থেকে তার স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, আকরাম হোসেন নিলয় নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ একজন অর্থদাতা বলে তারা জানতে পেরেছেন।

হলি আর্টিজান হামলার পর সংগঠনের ভেঙে যাওয়া থেকে নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল সাগর।

নিও জেএমবিতে সে ‘স্লেড উইলসন’ এবং ‘জ্যাক স্পেরো’ কোড নামেও পরিচিত ছিল বলে তদন্তকারীরা জানান।

এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে নিলয়ের বাবা আবু তোরাব এবং মা ও বোনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।

নিলয় ও তার পরিবারকে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে বিস্ফোরণের অর্থের জোগানদাতা হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছিল।

গত বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের আগের দিন রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আবস্থিত বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কাছে অবস্থিত পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে এক জঙ্গির অবস্থান চিহ্নিত করে পুলিশ।

পুলিশের কাছে ধরা দেওয়ার পরিবর্তে সে নিজের কাছে থাকা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।

তদন্তকারীরা জানান, ওই জঙ্গি জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের মূল আয়োজনে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ওই জঙ্গির আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।