মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন হিট ব্যাকে শিশুসহ নিহত ৭-৮
2017.03.30
ঢাকা

মৌলভীবাজারের নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযান চলার সময় শিশুসহ কমপক্ষে ৭-৮ জন নিহত হয়েছেন। তারা আত্মঘাতী হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেটে অপারেশন টোয়াইলাইট জঙ্গিমুক্ত ঘোষণার একদিন পর মৌলভীবাজারে অভিযান শুরু করে পুলিশ।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানার পাশেই আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
“অভিযান শেষে ভবনটির ভেতরে ঢুকে মানবদেহের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যা সাত থেকে আটজনের দেহের অংশবিশেষ হতে পারে বলে ধারণা করা গেছে,” মনিরুল ইসলাম বলেন।
তিনি আরও বলেন, পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই বুঝতে পেরে অভিযানের শুরুর দিকেই জঙ্গিরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহনন করেছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।
বাগান ঘেরা বাংলো ধাঁচের টিনশেড একতলা বাড়িটির প্রবেশপথসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।
ওই আস্তানায় কারা ছিল জানতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। তবে মনিরুল ইসলাম বলেন, তাঁরা কিছু তথ্য নিয়ে কাজ করছিলেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আস্তানাটি চিহ্নিত হয়।
যেভাবে অভিযান
বুধবার ভোর থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট ও সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামের পৃথক দুটি বাড়ি সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা হিসেবে ঘিরে রাখে পুলিশ। এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছটার দিকে নাসিরনগরের বাড়িটি ঘিরে ‘অপারেশন হিটব্যাক’ নামে এই অভিযান শুরু করে ঢাকা মহানগরের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট।
রাতের বিরতি ও পরে ভোরে ঝড়বৃষ্টির কারণে অভিযানে গতকাল সকালেরে দিকে কিছুটা ছেদ পড়েছিল। পরে বৃষ্টি কমে আসলে নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় আবারও অভিযান শুরু হয়।
বাসার তত্ত্বাবধায়কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভবনে নিহত ব্যক্তিরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। তবে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
বাড়ির মালিক লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমানের মামাতো বোনের স্বামী জুয়েল বাড়ি দুটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে তত্ত্বাবধায়ক জুয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেটে পুলিশের ডিআইজি কামরুল ইসলাম বলেন, বড়হাট এলাকার জঙ্গি আস্তানাটি খুঁজে পাওয়ার কিছু সময় পরে পুলিশ নাসিরপুরের আস্তানাটি সম্পর্কে জানতে পারে। পরে মৌলভীবাজারের এস পির নেতৃত্বে ওই বাড়িটি ঘেরাও করা হয়।
"তাদের আমরা আত্মসমর্পণ করতে বললে ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোড়ে। এরপরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সোয়াট ও কাউন্টার টেরোরিজমের সহায়তা চাওয়া হয়," সংবাদ সম্মেলনে জানান কামরুল ইসলাম।
নিহত ‘জঙ্গি’ সম্পর্কে যা বললেন প্রতিবেশি
নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানার পাশের বাড়িতে থাকা রিকশাচালক উজ্জ্বল বাড়িটিতে দুজন পুরুষকে দেখেছিলেন বলে জানান বেনারকে।
“এদের একজনের বয়স বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছর। অন্যজনের ৩০ থেকে ৩২ বছর। ধারণা করেছিলাম তারা শ্বশুর-জামাতা। বাড়িটিতে তিনটি কন্যা শিশুকে মাঝে মাঝে খেলা করতে দেখা যেতো। তবে দুই থেকে সাত বছর বয়সী এই শিশুরাও বোরকার মতো পোশাক পরে থাকত,” উজ্জ্বল বলেন।
বাড়িটির বাসিন্দারা কারও সঙ্গে মিশত না। কোনোভাবে দেখা হলেই ঘরের ভেতরে চলে যেতেন তারা। ঘরের দরজা জানালায় পর্দা দিয়ে রাখার ফলে তাদের ঘরের ভেতরে কিছু বোঝা যেতো না।
বয়স্ক পুরুষটি কাপড় ব্যবসায়ী এবং অন্যজন একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন জানালেও তারা নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে বাড়ির বাইরে যেতেন না।
বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুক্রবার
নাসিরপুরে অভিযান শেষ হলেও বড়হাটের বাড়িটির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, রাতে ওই এলাকা রেকি করার পরে অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বিশ্বস্ত সূত্র বেনারকে জানিয়েছে, রাতে কোনো অভিযান চালালো হবে না। শুক্রবার দিনেই এই বাড়িটিতে অভিযান চালাবে পুলিশ।
ভোটে প্রভাব ফেলেনি কুমিল্লার জঙ্গি আস্তানা
এদিকে কুমিল্লায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি পুলিশ ঘিরে রাখলেও বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তা কোনো প্রভাব ফেলেনি। ওই বাড়িটির পাশে থাকা কেন্দ্রেও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিক মাসুম বিল্লাহ বেনারকে বলেন, কুমিল্লার কোটবাড়ীর দক্ষিণ বাগমারা বড় কবরস্থানের পাশে তিন তলা যে বাড়িটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে তার পাশ দিয়েই জনসাধারণকে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। বাড়িটির অদূরে থাকা ভোট কেন্দ্রেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।
বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে বিস্ফোরকসহ জঙ্গি অবস্থান করছে সন্দেহে বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ, র্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। বাড়িটির কয়েক শ গজ পর্যন্ত ঘিরে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার এই আস্তানাটিতে অভিযান চালানো হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন।