এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় চলছে অভিযান
2017.04.26
ঢাকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযান চলছে। ঈগল হান্ট নামের ওই অভিযানটি রাত ৯টার দিকে ভোর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
এর আগে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের এই বাড়িটি ঘিরে ফেলে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সিটিটিসির সদস্যরা বলছেন, বাড়ির ভেতর দুটি শিশু সন্তানসহ আবু বকর নামের একজন জেএমবি সদস্য রয়েছেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন।
এর আগে সকালে সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই আস্তানাটিতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
"পুলিশ আস্তানাটি ঘিরে ফেলার পরপরই তার ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়," আব্দুল মান্নান বেনারকে বলেন।
রাত ৯টা ৫ মিনিটে অভিযানস্থলের কাছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ সদস্য প্রলয় কুমার জোয়ারদার অভিযান সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করেন। সেখানে তিনি ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত অভিযান মুলতবি রাখার ঘোষণা দেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, যে বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশ ঘিরে রেখেছে সে বাড়ির মালিকের নাম ঝিন্টু বিশ্বাস। আবু বকর কয়েকমাস আগে বাড়িটি ভাড়া নেন। আবু বকর পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি স্থানীয় বাজারে মসলা বিক্রি করতেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। আবু বকর ঈদ উদযাপন করতেন সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে।
অপারেশন ঈগল হান্ট
ভোরবেলা বাড়িটি ঘেরাওয়ের পরপরই কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। জঙ্গি আস্তানা থেকে সে সময় গ্রেনেড ছোড়া হয়।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিবেচনায় সকাল থেকেই ওই স্থানে ১৪৪ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
সশস্ত্র অভিযান শুরুর আগে পুলিশ আবু বকরের মা ফুলশানা বেগম ও চাচি চামেলি বেগমকে ডেকে আনেন। তাঁরা হ্যান্ড মাইকে আবু বকরকে স্ত্রী সন্তানসহ বেরিয়ে আসার অনুরোধ করেন। কিন্তু আবু বকর সে ডাকে সাড়া দেননি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পুলিশ গুলি ছুড়তে শুরু করে।
রাত ৯টা ৫মিনিটে অভিযান রাতের মতো মুলতবির ঘোষণা দেন প্রলয় কুমার জোয়ারদার। তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন। ভেতরে প্রবেশ না করায় কতজন ওই আস্তানায় আছে সে সম্পর্কে পুলিশ এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানান তিনি।
"আমরা এখনো ঢুকতে পারিনি। কাজেই বলতে পারছি না, ভেতরে কতজন আছেন। তবে জঙ্গিরা চার থেকে পাঁচটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে," প্রলয় বলেন। তিনি আরও জানান, তাঁরা ধারণা করছেন ভেতরে থাকা লোকজন পুরোনো জেএমবির সদস্য।
জনমনে আতঙ্ক
আমবাগানে ঘেরা বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা এবং এখান থেকে বোমা ছোড়া হচ্ছে এ বিষয়টি বুঝতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের কষ্ট হচ্ছিল। মোবারকপুর ইউনিয়নের সদস্য আবদুল আলিম বেনারকে বলেন, "মোটামুটি শান্ত নিরুপদ্রব এ এলাকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। প্রচুর গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে মানুষ আতঙ্কিত।"
পুলিশ বলছে শিশু থাকতে পারে সে আশঙ্কা থেকে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়। বারবার অনুরোধ জানানো হয়। তারপরও কাজ হয়নি।
পুলিশ সদর দপ্তরের কাউন্টার টেররিজম ফোকাল পয়েন্ট মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তাঁরা শিশুদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন।
"সন্তান বাবা মায়ের, কিন্তু শিশুরা আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের সম্পত্তি। আমরা মৌলভীবাজারেও আশা করেছিলাম, ওরা অন্তত বাচ্চাগুলোকে পুলিশের মাধ্যমে কারও জিম্মায় দেবে। তারা তা করেনি," মনিরুজ্জামান বলেন।
প্রসঙ্গত, মার্চের ২৯-৩০ তারিখ মৌলভীবাজারে 'অপারেশন হিট ব্যাক' এ জঙ্গিদের সাথে চারটি শিশুও নিহত হয়।