জঙ্গিবাদী হামলার শঙ্কায় বাংলাদেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.04.26
ঢাকা
190426_PM_Militency_1000.jpg গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ এপ্রিল ২০১৯।
[সৌজন্যে: বাসস]

জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের শঙ্কায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। টানা তৃতীয় দিনের মতো এ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারি বাসভবন গণভবণে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার পরিষ্কার কথা, বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সবসময়ই ‘উদ্বেগ’ (উদ্বিগ্ন) হওয়ার সম্ভবনা আছে।”

“কারণ নিউজিল্যান্ডের মতো শান্তিপূর্ণ একটা দেশ, যেখানে পুলিশও লাগে না; সেরকম দেশে যদি এ ধরনের জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটাতে পারে, বাংলাদেশে তো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ লেগেই আছে,” বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা মনে করেন, ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে সরকারের নেয়া ব্যবস্থার কারণে জঙ্গিরা কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতে পারছে না। তবে তারা শেষ হয়ে যায়নি।

এর আগে বৃহস্পতিবারের এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশেও জঙ্গি হামলার চেষ্টা চলছে’ জানিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বুধবার সংসদেও তিনি বাংলাদেশের জনগণকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহবান জানান।

সর্বশেষ শুক্রবার হাসিনা বলেন, “এখানে লুকোচাপা কিছু নাই। সেই হলি আর্টিজানের পর থেকে কিন্তু এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করে রাখছি। কিন্তু তারপরেও ‘শঙ্কা’ অবশ্যই আছে।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করেন।

দরকার সচেতনতা

দেশে সন্ত্রাসের ঝুঁকি আছে স্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যথেষ্ট সজাগ আছি। আমাদের গোয়েন্দারা চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে।”

সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় “আমরা সবসময় সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছি,” দাবি করলেও শেখ হাসিনার মতে শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা।

“শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ হবে না। সামাজিক সচেতনতা ছাড়া জঙ্গিদের নির্মূল করা যাবে না,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ‘ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “জঙ্গিবাদ দমনে সচেতনতা দরকার ঠিক আছে। কিন্তু সমাজ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে দরকার ‘ডির‌্যাডিক্যালাইজেশন’ কর্মসূচি।”

“সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও আমরা কিন্তু ‘ডির‌্যাডিক্যালাইজেশনের’ কোনো কর্মসূচি দেখছি না। ‘জঙ্গিবাদ’ ভুল হলেও একটি আদর্শ। শক্তি দিয়ে একটি আদর্শ নিঃশেষ করা যায় না।”

জঙ্গিবাদ বিরোধী বয়ান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃহস্পতিবারের অনুরোধে দেশের সব জামে মসজিদে শুক্রবার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী বয়ান দিয়েছেন ইমামরা। জুমার খুতবার আগে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের কুফল ও ভয়াবহতা তুলে ধরে এই বিশেষ বয়ান দেওয়া হয়।

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে গির্জা ও হোটেলে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শিশু জায়ান চৌধুরীসহ নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করারও অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুযায়ী প্রতিটি মসজিদে দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের ইমাম বয়ানে বলেন, “ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে বলা হয়েছে।”

জেলা শহর নওগাঁর কেন্দ্রীয় জামে সমজিদের ইমামও কোরান-হাদিসের আলোকে জঙ্গিবাদ বিরোধী বয়ান প্রদান করেন।

সেখানকার মুসল্লি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বেনারকে বলেন, “মসজিদের ইমাম ও আলেম সমাজের প্রতি মানুষদের শ্রদ্ধা অনেক। আলেম সমাজ বিভক্ত না হয়ে এক সুরে জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচার চালায়, তাহলে জঙ্গিরা মাথা চাঁড়া দিতে পারবে না।”
প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মন্দির, গির্জা, পেগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।