চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযান ইগল হান্ট শেষ, চার ‘জঙ্গি’ নিহত
2017.04.27
ঢাকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ‘জঙ্গি আস্তানা’য় অপারেশন ‘ইগল হান্টে’ সন্দেহভাজন চার জঙ্গি নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এক নারী ও এক শিশুকে।
রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খুরশিদ হোসেন বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান। শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহিনী শিবনগর গ্রামে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ির পাশে তিনি ব্রিফিং করেন।
ব্রিফিংয়ে অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তাঁর মতে, অন্যান্য অপারেশনের চেয়ে এবারের অপারেশনটি বেশি সফল।
“চার জঙ্গি আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে আমরা একজন নারী ও একজন শিশুকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি। ভেতরে নারী ও শিশু থাকায় আমরা বারবারই মাইকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের অনুরোধ করি। এমনকি অভিযান শেষ হওয়ার আগেও বিকেলের দিকে আহ্বান জানানো হয়েছিল,” বলেন খুরশিদ হোসেন।
পুলিশ বলছে, নিহত চারজনের একজনের নাম আবু। আর জীবিত উদ্ধার হওয়া নারীর নাম সুমাইয়া। তিনি আবুর স্ত্রী, উদ্ধার হওয়া শিশুটি আবু ও সুমাইয়া দম্পতির। তাঁদের আরও একটি সন্তান রয়েছে। তবে অভিযানের সময় সে ওই বাড়িতে ছিল না। নিহত আরও তিনজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং জেলা পুলিশ অবস্থান করছিল।
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত বুধবার সকালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ওই বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে। বাড়ির সামনের অংশ ঢালু হয়ে জলার সঙ্গে মিশেছে। পেছনের অংশটি আমবাগানে ঘেরা। জেন্টু বিশ্বাসের এই বাড়িটি কয়েকমাস আগে আবু ভাড়া নিয়েছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়।
অভিযান শুরুর পরপরই আস্তানাটির চারপাশে ৫০০ গজ এলাকা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল রাতেও ওই নির্দেশনা জারি ছিল বলে জানান শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।
“জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনো নির্দেশ বহাল আছে। আগামীকাল (শুক্রবার) সকালে পুলিশ ও প্রশাসনের বৈঠকের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” বেনারকে বলেন শফিকুল ইসলাম।
দফায় দফায় আত্মসমর্পণের অনুরোধ
রাত ৯টায় ইগল হান্টের সাময়িক বিরতি ঘোষণার পর সকাল ৯টায় ফের অভিযান শুরু করে। অভিযান শুরুর পর থেকেই মুহুর্মুহু গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। ১০টা ৬ মিনিটে একবার বিকট বিস্ফোরণ ঘটে।
বেলা সোয়া ১২টার দিকে আবারও আস্তানার ভেতরে থাকা ‘জঙ্গি’দের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। বলা হয় সেটিই শেষ অনুরোধ। এর পরপরই ঘটনাস্থলের কাছে একটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিকট শব্দে সে সময় গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে।
অভিযানটি পরিচালনা করেছে সোয়াট। জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আস্তানায় ঢোকার মুখে বোমাটি পড়ে থাকতে দেখে। পরে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
সকাল থেকে দফায় দফায় আত্মসমর্পণের অনুরোধের পরও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করেনি। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ভেতরে থাকা নারী ও শিশুদের বের করে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। বিকেল ৫টা থেকে সোয়া ৫টার মধ্যে দ্রুত গতিতে আস্তানার ভেতর থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স বের হয়ে আসে।
ওই অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ছিলেন একজন নারী। পনেরো-বিশ মিনিট পর অন্য অ্যাম্বুলেন্সে শিশুটিকে বের করে নিয়ে আসা হয়। দুজনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
আহতদের কোথায় আঘাত লেগেছে সে বিষয়ে জানতে সিভিল সার্জন কাজী শামীম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি।
বাবা-মায়ের সঙ্গে বিরোধ ছিল
শিবগঞ্জ উপজেলার শিবনগরের ওই আস্তানার কাছেই ত্রিমোহিনীতে আবুদের পৈতৃক ভিটা। গতকাল হ্যান্ড মাইকে মা ফুলশানা বেগম ও চাচি চামেলি বেগমের অনুরোধ উপেক্ষা করেই ভেতরে থেকে যান আবু। বাড়ি ফিরে বিছানায় পড়ে যান ফুলশানা।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, আবু ফুলশানার প্রথম সন্তান। ছেলের সঙ্গে বিবাদ থাকলেও সে মায়ের কথা শেষ পর্যন্ত শুনবে এমনটাই বিশ্বাস ছিল তাঁর। ভেতরে থাকা নাতনির জন্যও কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। গোলাগুলির তোড়ে নাতনি বাঁচবে না এমন শঙ্কার কথাও বলেছেন সাংবাদিকদের।
মোবারকপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আব্দুল আলীম বেনারকে বলেন, “আবুর বাবা ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। তারপর থেকে একরকম বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নই ছিল।”