জঙ্গি সন্দেহে ঢাকার আশপাশ থেকে আটক ৬, ঝিনাইদহের অভিযান সমাপ্ত
2017.05.08
ঢাকা
রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থেকে একই দিনে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক রয়েছেন।
এ ছাড়া ঝিনাইদহ জেলায় কাছাকাছি সময়ে দুটি অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন। অভিযানে দুজন নিহত হয়। গত শনি ও রবিবার এসব ঘটনা ঘটে।
ঝিনাইদহে গত রবিবারের অভিযানে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের একজন কর্মকর্তাসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁরা এখন আশঙ্কামুক্ত।
একের পর এক পুলিশি অভিযানে দুর্বল হয়ে পড়া জঙ্গিরা কৌশল পাল্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আগের চেয়ে সফলতার সঙ্গে এসব জঙ্গি দমন করছে বলে মনে করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে জঙ্গিবাদ বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা চাপের মধ্যে পড়েছে বলে ছোট ছোট গ্রুপে নতুন ভাবে অর্গানাইজড হওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য বিভিন্ন অভিযানে দুই, তিন বা চারজনের দলের সন্ধান মিলছে। বড় কোনো আস্তানা বা নেতাকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
তাঁর মতে, “ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দা তথ্য আগের তুলনায় অনেক ভালো হওয়ায় জঙ্গিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে পুলিশ”
“তবে জঙ্গিরা এখন আত্মঘাতী হামলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যা আশঙ্কাজনক,” মনে করেন সাখাওয়াত হোসেন।
ঢাকা ও আশুলিয়া থেকে আটক ছয়জন
রাজধানী ঢাকার মতিঝিল ও সাভারের আশুলিয়া এলাকা থেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার রাতে পৃথক অভিযানে র্যাব দুজনকে এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
“গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে ইমরান ও রফিক নামের ওই দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়,” বেনারকে জানান র্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) মুফতি মাহমুদ খান।
এরা জেএমবির সদস্য বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন; এবিএম সোহেল উদ দৌলা সোহেল, আহাদুল ইসলাম সাগর, জগলুল হক মিঠু ও তোয়াসিন রহমান।
তারা আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ। রোববার রাজধানীর মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে সোহেল উদ দৌলা আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক, যাকে গত ৪ মে বিকেল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে দাবি করছে তার পরিবার।
সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল
সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মতিঝিলের গ্রেপ্তার চারজন সম্পর্কে জানান কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, আটক চারজন আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য। যে টিমের সঙ্গে মেজর (চাকরিচ্যুত) জিয়া পরিচালিত আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের যোগাযোগ ছিল।
মনিরুল বলেন, চারজনের এই দলের প্রধান সোহেল উদ দৌলা, বাকিরা তারা সহযোগী। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছেন। কথিত জিহাদে অংশ নিতে তারা প্রথমে আফগানিস্তান, পরে সিরিয়া যেতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে সিরিয়ার আশপাশের দেশে সহজে ভিসা পেতে তারা বিভিন্ন দেশও ভ্রমণ করছিলেন।
মনিরুল আরও বলেন, এই চারজন পলাতক জঙ্গি হাসান ওরফে রেজার মাধ্যমে ২০১৪ সালে তারা সংগঠনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে অংশ নেন। তারাও ব্লগার হত্যার পরিকল্পনা করার দায়িত্বে ছিলেন।
এই চারজনের কাছে দুটি করে ল্যাপটপ, নোটবুক, মোবাইল ফোন একটি পাসপোর্ট ও দুটি অনুবাদ করা বই জব্দ করেছে পুলিশ।
সোহেল উদ দৌলা নিখোঁজ প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম কিছু জানেন না বলে জানান। তবে গত ৬ মে এ বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার ভাই এবিএম শফিক উদ দৌলা।
শফিক বেনারকে জানান, “ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার কারণ জানি না। তবে রোববার রাতে মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
বিস্ফোরক সংগ্রহ ও সরবরাহের দায়িত্বে ছিল জেএমবি সদস্যরা
এর আগে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান জানান, “গত ১০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জেএমবির এক নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান হোসেন ও রফিকুল ইসলামেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা একজনের স্বজন নিষিদ্ধ এই জঙ্গিদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও দাবি করে র্যাব। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান মুফতি মাহমুদ।
তিনি জানান, ২০০১ সালে হুজি (বি) তে যোগ দেওয়া ইমরান ২০১৪ সালে জেএমবিতে যোগ দেন। এরপর থেকে তিনি সংগঠনটির জন্য বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ করে রফিকের কাছে পাঠাতেন। চাহিদা অনুযায়ী সেসব বিস্ফোরক চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতেন রফিক, ২০১৫ সালের শেষের দিকে তিনি জেএমবিতে যোগ দেন এবং বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ রয়েছে তার। রফিক চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।
“কোনো কোনো সময় নারী বাহক কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব রাসায়নিক এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পাঠাতে হতো,” জানান মুফতি।
ইমরান ও রফিকের কাছ থেকে দুই বোতল সালফিউরিক এসিড, পাঁচ প্যাকেট স্প্লিন্টার, বোমা তৈরির এক কেজি ৬৫০ গ্রাম রাসায়নিক উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।