আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ইমামকে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা

জেসমিন পাপড়ি
2017.05.09
ঢাকা
আহত ইমাম মুস্তাফিজুর রহমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহত ইমাম মুস্তাফিজুর রহমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। মে ০৮, ২০১৭।
স্টার মেইল

বাংলাদেশে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের একজন ইমামকে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনগণ। ঈমানি দায়িত্ব থেকেই কাদিয়ানি ইমামের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে আটক হামলাকারি।

গত সোমবার রাত পৌনে ন’টার দিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় সরিষা ইউনিয়নের কানপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে বেনারকে জানান ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।

আহত ইমাম মোস্তাফিজুর রহমানকে (৩৫) প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। কানপুর গাংপাড়া গ্রামের আহমদিয়া মসজিদে ইমামতি করতেন মুস্তাফিজুর।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক জেসমিন চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আহত ইমামের কয়েকটি অপারেশন হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন।”

এ ঘটনার সঙ্গে কোনো গোষ্ঠী জড়িত কি না বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কাদিয়ানি বিদ্বেষীরা এ কর্মকাণ্ড করতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এর সঙ্গে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর জড়িত থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে এশার নামাজ পড়ানো শেষে যখন মোস্তাফিজুর মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন তাঁকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। আশপাশের লোকজন ছুটে হামলাকারীদের একজনকে আটক করে পুলিশে দেয়। তার নাম আব্দুল আহাদ মোহাম্মদ উল্লাহ।”

“হামলাকারীদের উদ্দেশ্য বা কারা এর সঙ্গে জড়িত সে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে,” জানান ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার।

কাদিয়ানিরা মূলত নিজেদের আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। তবে সুন্নি এবং শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানেরা তাদেরকে মুসলমান হিসেবে স্বীকার করে না। ফলে এ দেশে তারা মুসলিম সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক কট্টরপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার দাবির একটিতে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করার কথা বলা হয়।

জঙ্গিবাদ বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “হেফাজতকে যেমন আহমদিয়া সম্প্রদায়ে বিরোধিতা করতে দেখা গেছে, তেমনি অতীতে হরকাতুল জিহাদ তাঁদের ওপর আক্রমণও চালিয়েছে। অর্থাৎ তাদের (আহমদিয়া) নিয়ে সমাজের ভেতরে একটা দ্বন্দ্ব আছে।”

“স্বাভাবিকভাবে বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটছে, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং কোনো উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী কোনো গোষ্ঠী এ কর্মকাণ্ডে যুক্ত বলে আমি বিশ্বাস করি,” বলেন নূর খান।

আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুলিশ চাইলে সঠিক তথ্য বের করতে পারবে বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক।

এদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ তাফসির চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “যারা আমাদের সম্প্রদায়কে দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে না, তারাই সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যেই মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর হামলা করিয়েছে।”

মৌলবাদীরা এ হামলা চালাতে পারে বলে মনে করেন আহমদিয়া মুসলিম জামায়াত বাংলাদেশের ন্যাশনাল পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারি আহম্মেদ তবশির।

ঈমানি দায়িত্বে হামলা: হামলাকারী

এদিকে আটক হামলাকারী আবদুল আহাদকে আহত অবস্থায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে। সকালের দিকে কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

এ সময় আহাদ বলেন, ইমাম মোস্তাফিজুর আশপাশের মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে কাদিয়ানি বানাচ্ছে। এই কারণেই তাকে হত্যা করা ঈমানি দায়িত্ব বলেই আমি তাকে কুপিয়েছি।

আহাদের সঙ্গে আলাপকারী ময়মনসিংহের সাংবাদিক আতাউর রহমান জুয়েল বেনারকে এসব কথা জানান।

“তার দাবি, ইমাম মুস্তাফিজুর আমাদের (মুসলমানদের) নবী রাসুল (সা.) এর হাদিসকে বিকৃত করেছে ও তার মান-সম্মানে আঘাত হেনেছে” বলেন জুয়েল।

জানা যায়, আহাদ নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দার চারিয়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। সে ইসলামপুর দারুস সুন্নাত জাফরিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। এর আগে চট্টগ্রামের মেকল মাদ্রাসায় এক বছর পড়াশোনা করে আহাদ।

সাংবাদিক আতাউর বলেন, “আহাদ কোনো দল বা গোষ্ঠীর সদস্য নয় দাবি করে জানায়, ইলিয়াস হোসেন ও জহিরুল ইসলাম নামের দুই সহপাঠীকে নিয়ে নিজেই ইমামকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে সে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।