ঝিনাইদহে জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার
2017.05.16
ঢাকা

ঝিনাইদহে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সুইসাইডাল ভেস্ট আর বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া অভিযান রাতের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে অভিযান স্থগিত করে ঝিনাইদহ র্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মনির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “কাল (বুধবার) সকালে আমরা আবার অভিযানে যাব।”
সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আধা পাকা বাড়ি দুটি ঝিনাইদহ র্যাব ক্যাম্প থেকে মাত্র ৪’শ মিটার দূরে অবস্থিত। দিনভর অভিযান চালিয়ে ওই দুই আস্তানার পাঁচটি স্পট থেকে ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৫টি শক্তিশালী বোমা, ১৮টি ডিনামাইট স্টিক, বোমা তৈরির ১৮৬টি পিভিসি সার্কিট, ৪ ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য ও ১টি অ্যান্টি মাইন উদ্ধার করা হয়েছে।
এই নিয়ে গত এক মাসে ঝিনাইদহে পাঁচটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালালো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সব অভিযানের পর থেকে এই এলাকা কড়া নজরদারিতে রেখেছিলেন গোয়েন্দারা।
ঝিনাইদহসহ সম্প্রতি খোঁজ পাওয়া জঙ্গি আস্তানাগুলো সীমান্ত এলাকায়। দেশের বাইরে থেকে সেখানে বিস্ফোরকসহ অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকার আশায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছাকাছি অথবা পুরোনো আস্তানাগুলোতে জঙ্গিরা আবারও জড়ো হচ্ছে বলে তাঁদের ধারণা।
এ প্রসঙ্গে জঙ্গিবাদ বিশ্লেষক নূর খান বেনারকে বলেন, “যত জঙ্গি আস্তানা পাওয়া গেছে সেগুলোর বেশির ভাগই ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এটা চিন্তার বিষয়।”
তিনি বলেন, “এসব আস্তানায় যেসব বিস্ফোরক পাওয়া যাচ্ছে, তা তুলনামূলক অনেক শক্তিশালী। অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে এগুলো পাওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত। তাই এগুলো দেশের বাইরে থেকে আসছে সন্দেহ করা যায়।”
তাঁর মতে, “ঝিনাইদহের এই জঙ্গি আস্তানাটি র্যাব অফিসের কাছে। আগেও সেখানে অভিযান হওয়ায় সন্দেহের বাইরে থাকা যাবে বলে জঙ্গিরা ধরে নিয়েছিল।”
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই দুই বাড়ির আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাতে সেলিম হোসেন (৪০) ও প্রান্ত বিশ্বাস (১৭) নামে ওই গ্রামের দুই ব্যক্তিকে আটক করে র্যাবের টহল দল। তারা দুজন নব্য জেএমবি’র সদস্য। গত ৭ মে ঝিনাইদহের মহেশপুরের বজরাপুর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালে নিহত তুহিন আটক সেলিমের ভাই। সেলিমের বাবা আতাউর রহমান ও প্রান্তর বাবা মতিউর রহমান আপন দুই ভাই।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, জঙ্গি তুহিন নিহত হওয়ার পরে এই দুটি বাড়িতে এর আগেও তিনবার তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। সেসময় কিছুই পাওয়া যায়নি।
মেজর মনির সাংবাদিকদের জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম ও প্রান্ত চুয়াডাঙ্গা গ্রামে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান দেয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে সেখানে অভিযান শুরু করা হয়।
তিনি জানান, প্রথমে সেলিমের বাড়ির পাশে মাটির নিচে থেকে ৫টি শক্তিশালী বোমা ও প্রান্ত বিশ্বাসের বাড়ির পাশের বাঁশ বাগান থেকে ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়। দুপুরের পর আরও তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮টি ডিনামাইট স্টিক, বোমা তৈরির ১৮৬টি বৈদ্যুতিক সার্কিট, ৪ ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করে র্যাব। পরে সন্ধ্যা হওয়ায় অভিযান স্থগিত করা হয়।
ভীত সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী
এদিকে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলাকালে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন ওই গ্রামের মানুষ। স্থানীয় সাংবাদিক রবিউল ইসলাম বেনারকে জানান, “নিজেদের এত কাছে জঙ্গি আস্তানা এবং এত বিস্ফোরক ছিল জানতে পেরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় ওই এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেয়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।”
এর আগে গত ২০ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের এক বাড়িতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দুই দিনের অভিযান শেষে আব্দুল্লাহ নামে ধর্মান্তরিত ব্যক্তির ওই বাড়ি থেকে ২০টি কেমিক্যাল কন্টেইনার, ৬টি বোমা, ৩টি সুইসাইড ভেস্ট, ৯টি সুইসাইড বেল্ট এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তবে জঙ্গি আস্তানাটিতে কাউকে পাওয়া যায়নি। চুয়াডাঙ্গা গ্রামটি আবদুল্লাহর গ্রামের পাশের গ্রাম। এই গ্রামে তার (আবদুল্লাহ) শ্বশুর বাড়ি রয়েছে।
এরপর গত ৫ মে ‘সাঁটল স্প্লিট’ নামে পুলিশের অভিযানে মহেশপুর উপজেলায় এক বাড়িতে নব্য জেএমবির দুই জঙ্গি নিহত হন। একই দিন সদর উপজেলার লেবুতলায় অন্য একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৮টি বোমা ও একটি ৯ এমএম পিস্তল পাওয়া যায়।