জেএমবির সাবেক প্রধান সাইদুর রহমানের সাড়ে ৭ বছর জেল
2017.05.25
ঢাকা

জেএমবির সাবেক প্রধান সাইদুর রহমানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় সাত বছর ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইমরুল কায়েস এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার অপর দুই আসামি আবদুল্লাহ হেল কাফি এবং তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার আগেই হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান। আবদুল্লাহ হেল কাফি ও তার স্ত্রী আয়েশা আক্তারকেও আদালত একই দণ্ড দিয়েছেন।
তবে পলাতক দুই আসামির অবস্থান সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানা যায়।
“আবদুল্লাহ হেল কাফি ও তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার কোথায় কীভাবে আছেন, সে সম্পর্কে আমরা এখনো জানতে পারিনি,” বেনারকে জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের উপকমিশনার মোহিবুল ইসলাম খান।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৫ মে ঢাকার দনিয়া নূর মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে সাইদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় সাইদুর রহমানের সঙ্গে আরও গ্রেপ্তার করা হয় সাইদুরের স্ত্রী নাইমা আক্তার, জেএমবির কথিত সামরিক শাখার সমন্বয়ক আমির হোসেন ওরফে শরীফ, এহসার সদস্য (সার্বক্ষণিক) নূর হোসেন ওরফে সবুজ ও আবদুল্লাহ হেল কাফি।
গতকাল রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন জেএমবির সাবেক এই প্রধান।
এদিকে বিচারাধীন অবস্থায় সাইদুর কারাগারে সাত বছর কাটানোর ফলে এই মামলায় আর মাত্র ছয় মাস তাঁকে কারাগারে থাকতে হবে।
“আজ (২৫ মে) কারাগারে সাইদুর রহমানের সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে। তাঁকে এই মামলায় আর ছয় মাস থাকতে হবে,” বেনারকে বলেন সাইদুর রহমানের জন্য রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী শাহনাজ সাথী।
তবে শায়খ আবদুর রহমানের বাড়িতে অভিযানের পর সহযোগী হিসেবে সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। সেই মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে জজ কোর্ট। তাই আপাতত তাঁর মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই।
সাইদুরের গ্রেপ্তার ও বিচার
সাইদুর রহমান এক সময় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে 'মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি ছিলেন।
তার আত্মপ্রকাশ ২০০৫ সালে একযোগে সারা দেশে বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, শুরা কমিটির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানিসহ ছয়জনের ফাঁসির পর দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন সাইদুর রহমান।
সাইদুর রহমানকে গ্রেপ্তারে সে সময় পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা, সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)র বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল গঠন করা হয়েছিল। কয়েক মাস চেষ্টার পর তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
২০১০ সালের ২৪ মে দনিয়ার একটি আস্তানায় পুলিশ অভিযান চালায়। ওই অভিযানে আট পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় কমান্ডার শিবলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শিবলুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাইদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরদিন অপর তিন সহযোগীসহ সাইদুরের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার অভিযোগে ঢাকার কদমতলী থানায় সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগপত্র দায়েরের পর ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে বিচার কাজ শুরু হয়। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তারপর প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে এক সময়ের এই মোস্ট ওয়ান্টেড আসামির কার্যক্রম থেমে যায়।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনজুর মওলা চৌধুরী মামলাটি মাঝপথে আটকে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দেন।
“সন্ত্রাস বিরোধী আইনে হওয়া মামলার কাজ শুরু করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। অনুমতি না নিয়েই মামলার কাজ শুরু হয়। ত্রুটিটির বিষয় চোখে পড়ায়, মাঝপথে বিচার আটকে যায়। নতুন করে বিচার শুরুর দুই মাসের মাথায় আজ (বৃহস্পতিবার) রায় হলো,” বেনারকে বলেন মনজুর মওলা।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নতুন করে নথি পাঠানো হলে গত বছরের ২৬ আগস্ট অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। গত ৮ মে সাইদুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শেষ হয়।
সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে শিবগঞ্জ থানা ও কদমতলী থানায় মামলা আছে। অপর একটি মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এই মামলার অপর আসামি আবদুল্লাহ হেল কাফি জামালপুর থানার একটি মামলার আসামি।
কে এই সাইদুর
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলায় সাইদুর রহমানের জন্ম। ১৯৭৭ সালে জামাত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরে যোগ দেন। ১৯৭৮-৮০ সাল পর্যন্ত ছাত্র শিবিরের মৌলভী বাজার জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন।
পরে ১৯৮৬ সালে জামাত ইসলামীর রাজনীতিতে যোগ দিয়ে জামাতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য হন সাইদুর। ১৯৮৯ সালে তাকে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৬ সালে সাইদুর জেএমবির আমির হন।
সাইদুর রহমানের পরিবারের সিংহভাগ সদস্য জেএমবির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাইদুর ১৯৮০ সালে প্রথম বিয়ে করেন। এই সংসারে চার ছেলেমেয়ে। বড় ছেলে শামীম ছিলেন জেএমবির আইটি শাখার প্রধান।
২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট একযোগে সারা দেশে বোমা হামলার পরপরই শামীমকে সস্ত্রীক গ্রেপ্তার করা হয়। সাইদুরের মেয়ে শিরিনের স্বামী জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানী।