মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি আইএস জঙ্গির মৃত্যু তদন্ত করা হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.05.26
ঢাকা
আইএস এর বিরুদ্ধে অভিযানের সময় মসুল শহরের নিকটবর্তী হাতরায় একটি যুদ্ধযানের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ইরাকের আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। আইএস এর বিরুদ্ধে অভিযানের সময় মসুল শহরের নিকটবর্তী হাতরায় একটি যুদ্ধযানের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ইরাকের আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। ২৬ এপ্রিল ২০১৭।
AFP

ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করা হবে না বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

চলতি মাসের শুরুতে একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যুদ্ধে বাংলাদেশি তরুণ তাজ রহমানের মৃত্যুর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে ওই প্রতিবেদনে তাজ এর মৃত্যুর সময়কাল সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।

ওই প্রতিবেদন জানায়, তাজ প্রথমে সাইপ্রাস পরে ফিনল্যান্ডে যান, সেখান থেকে ২০১৫ সালের দিকে আইএস এ যোগ দেন।

“আমাদের কাছে তার মৃত্যু সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই,” গত সপ্তায় এক সাক্ষাৎকারে বেনারকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের এটা তদন্ত করারও প্রয়োজন নেই, আমরা এসব নিয়ে তেমন ভাবছিও না।”

ঢাকা ট্রিবিউনে ১২ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইএস সমর্থিত মিডিয়ায় ছবিসহ ‘আবু ইসমাইল আল-বাঙালি’ নামে একজন এর মৃত্যু সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে আবু ইসমাইলের মৃত্যুর তারিখ, স্থান বা কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।

বাংলা ট্রিবিউন নিজেদের প্রতিবেদনে ‘আবু ইসমাইল’কে তাজ রহমান হিসেবে চিহ্নিত করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাজ এর এক আত্মীয় বেনারকে নিশ্চিত করেন যে ওই ছবিটি তাজ রহমানের। তাজ সিরিয়াতে মারা গেছেন বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তাঁরা তথ্যটি যাচাই করলেও পুলিশকে বিষয়টি জানাননি। কারণ তাজের পরিবার তাজের প্রসঙ্গটি ভুলে যেতে চাচ্ছে।

“এ বছর মে মাসের ৮ তারিখে একজন আইএস মিডিয়াতে প্রকাশিত আবু ইসমাইল আল বাঙালির ছবিসহ মৃত্যু সংবাদের প্রতিবেদনটি আমাদের দেখিয়েছে। এটা নিশ্চিত যে ওই ছবিটা তাজের। সে সিরিয়াতে মারা গেছে,” বেনারকে বলেন ওই আত্মীয়।

তিনি বলেন, “এটা সত্যিই বিস্ময়কর যে তাজের মতো একজন সংস্কৃতিকর্মী কীভাবে আইএস জঙ্গিতে পরিণত হতে পারে। অন্য কেউ আমাদের এই দুঃখ বুঝতে পারবে না।”

ঢাকা ট্রিবিউন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়স্ক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তাজ ছিলেন ব্যান্ড দলের ড্রামার। পরবর্তীতে তিনি ফিনল্যান্ডে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করেন।

‘তাজের ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত চরমপন্থী’

পারিবারিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সাথে তাজের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

বেনারকে তাজের ওই আত্মীয় জানান, ২০০১-২ সালের দিকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়ার জন্য তাজ সাইপ্রাস যান। পড়াশোনাসহ প্রায় এক দশক সেখানে থাকার সময় তিনি বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও বারে কাজ করেন। পরে তার লাটভিয়ান স্ত্রী ডিটার সাথে ফিনল্যান্ডের ওলুতে চলে যান।

পরবর্তীতে ডিটার সাথে তাজের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর তিনি সামিয়াকে বিয়ে করেন।

বেনারকে তাজের ওই আত্মীয় জানান, ফিনল্যান্ডেই তাজ একজন প্রবাসী বাংলাদেশির কাছ থেকে ইসলামি চরমপন্থার সাথে পরিচিত হয়ে সেখানেই জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হন।
তিনি বলেন, “ফিনল্যান্ডে সাত থেকে আট মাস থাকার পর তাজ নামাজ রোজা ইত্যাদি ইসলামি রীতিনীতির দিকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকে পড়ে। সেসময় তার কয়েকজন বন্ধু আমাদের জানিয়েছিল যে, তাজের ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত চরমপন্থী হয়ে উঠেছে।”

“সে তার বাচ্চা, দ্বিতীয় স্ত্রী ও শ্বশুরসহ সিরিয়াতে গিয়েছিল, সাথে অন্যরাও ছিল। সে সিরিয়াতে মারা গেলেও তার বৌ বাচ্চা বা শ্বশুরের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না,” বলেন তিনি।

‘বাংলাদেশ থেকে কেউ আইএস এ যোগ দেয়নি’

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস এ যোগ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত আটজন বাংলাদেশি আইএস জঙ্গি মারা যাবার সংবাদ পাওয়া গেছে।

ওই অঞ্চলে নিহতদের মধ্যে একজনকে পেন্টাগনের সূত্রে আইএস এর তথ্যপ্রযুক্তি সমন্বয়কারী সাইফুল হক সুজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিক সুজন যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমান। সুজন ২০১২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিমান হামলায় রাকাতে মারা যান।

২০১৫ সাল থেকেই বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ দেশে আইএস এর উপস্থিতি অস্বীকার করে আসছে। এমনকি ২০১৬ সালের জুলাইতে আইএস এর পক্ষ থেকে গুলশান হামলার দায় স্বীকার করার পরও সরকার দেশে আইএস এর অস্তিত্ব অস্বীকার করছে।

“দেখুন, আমি নিশ্চিতভাবে বলছি যে, বাংলাদেশ থেকে গিয়ে কোনো বাংলাদেশি আইএস এ যোগ দেয় না,” বেনারকে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ইউরোপ, কানাডা এবং অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গিয়ে আইএস এ যোগ দিতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই বাংলাদেশ থেকে গিয়ে নয়।

তবে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন এই দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “অন্তত ৫০ জন বাংলাদেশি আইএসে যোগ দিয়েছে; বেশিরভাগই তৃতীয় কোনো দেশ থেকে সেখানে যায়। ... কিন্তু কিছু কিছু তরুণ নিরাপত্তা সংস্থার দৃষ্টি এড়িয়ে বাংলাদেশ থেকেও সরাসরি সিরিয়া ও ইরাক গিয়ে আইএস এ যোগ দিয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।