জঙ্গিবিরোধী তিন অভিযানে গার্মেন্টস মালিকসহ গ্রেপ্তার ১০
2017.06.12

গত দুই দিনে পৃথক তিন অভিযানে রপ্তানিমুখী একটি পোশাক কারখানার মালিকসহ মোট ১০জন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রোববার ভোর রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে জিম টেক্স গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান আহমেদকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১।
সোমবার ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে নব্য জেএমবির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম।
এ ছাড়া গতকালই রাজশাহীর তানোর উপজেলার ডাঙাপাড়া গ্রামের একটি বাড়ি থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার ও নয়জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
রোববার কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান ইমরান আহমেদ সম্পর্কিত তথ্য দেন।
র্যাব জানায়, ইমরান আহমেদ ২০১২ সালে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর থেকে তিনি জঙ্গিবাদে অর্থায়ন, জঙ্গিদের আশ্রয়, নিহত জঙ্গিদের পরিবারগুলোকে অর্থ দিয়ে আসছিলেন।
র্যাব বলছে জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান আহমেদ জানান, পুরোনো জেএমবি ও নব্য জেএমবির সদস্যদের একই মঞ্চে আনার কাজ চলছে। এ মুহূর্তে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘আবু মুহারিব’ নামের এক ব্যক্তি।
ইমরানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে ‘সাজিদ’ নামে এক ব্যক্তির। এই সাজিদ সিলেটের আতিয়া মহলে অন্যান্য জঙ্গিদের সঙ্গেই ছিল। অভিযানের দিন দুয়েক আগে ঢাকায় এসে ইমরান আহমেদের মহাখালির বাসায় আশ্রয় নেয়।
আবু মুহারিব কে, তাঁর জাতীয়তা কী এ সম্পর্কে এখনো র্যাব-১১ নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ওই ইউনিটের কর্মকর্তা আলেপউদ্দীন।
এদিকে র্যাব এর একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানায়, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে আইয়ূব বাচ্চুর নাম প্রকাশ করেছে। র্যাবের ধারণা সাজিদই আইয়ূব বাচ্চু। সানজিদ, আরমান ও লালভাই নামে সাজিদের বেশ কয়েকটি ছদ্মনাম রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িত কোনো ব্যক্তির জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি একেবারেই নতুন। এর আগে দুজন গার্মেন্টস মালিক গ্রেপ্তার হলেও তারা বড় মাপের ব্যবসায়ী ছিলেন না।
জিম টেক্সে এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী এই কারখানাটি ২০০৩ সালে চালু হয়। এই কারখানায় প্রধানত রপ্তানিমুখি সোয়েটার ও নিটওয়্যার উৎপাদিত হয়ে থাকে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে জিম টেক্সের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।
গত বছরে এই প্রতিষ্ঠানটি মোট রপ্তানি করেছে ৫০লাখ ডলারের পণ্য। এ বছর এখন পর্যন্ত এর রপ্তানি পণ্যের মূল ২০ লাখ ডলারের সম পরিমাণ।
ইমরান আহমেদ সম্পর্কে জানতে তাদের ওয়েবসাইটে থাকা মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোনটি ধরেননি।
“ধারাবাহিক অভিযানের পরও জেএমবির সাংগঠনিক কাজ থেমে নেই বলে আমরা খবর পাচ্ছি। তারা এখন মূলত সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে,” মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন।
জেএমবি আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের ভাবধারা অনুসরণ করে থাকে। গুলশানের হলি আর্টিজানে এ দলটি হামলা চালিয়েছিল।
তবে হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের কারও সঙ্গে ইমরানের পরিচয় ছিল কি না তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয় র্যাব।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি করে ১৮ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জঙ্গিরা হত্যা করার পরবর্তী সময়ে সরকারের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে।
ঢাকায় নব্য জেএমবির ছয় সদস্য গ্রেপ্তার
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে সোমবার নব্য জেএমবির ছয় সদস্য গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রগতিশীল আলেম ওলামাদের হত্যার পরিকল্পনা করছিল। তারা জানিয়েছে আইয়ূব বাচ্চু ওরফে লাল ভাই তাদের র্নিদেশদাতা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জাহিদুল ইসলাম ওরফে জোহা ওরফে বোতল ওরফে মাশরুর, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে আবু মোহাম্মদ, মো. আদনান, মেহেদী হাসান ইমন ওরফে আবু হামজা, খালিদ সাইফুল্লাহ, শামসুদ্দীন আল আমিন ওরফে আবু আহমেদ।
রাজশাহীতে গ্রেফতার তিন
রাজশাহীর তানোর উপজেলার ডাঙাপাড়া গ্রামের একটি বাড়ি থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার ও নয়জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা জানায় তাদের বাড়িতে সুইসাইডাল ভেস্ট ও অস্ত্র আছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের জন্য অপেক্ষা করছিল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ইসরাফিল আলম, তার ভাই ইবরাহীম ও ভগ্নিপতি রবিউল ইসলাম।
ইসরাফিল ও ইবরাহিমের বাবা রমজান আলী ও মা মর্জিনা বেগমসহ পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরা এখন থানায় আছেন।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়। বগুড়ার গোয়েন্দা বিভাগ এ সন্দেহভাজন আস্তানার খবর পান। তাঁরাও অভিযানে অংশ নেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।