ঢাকায় পুলিশ বক্সের সামনে থেকে বোমা উদ্ধার

জেসমিন পাপড়ি
2019.07.24
ঢাকা
190724_recovered_bomb_1000.JPG ঢাকা মোহাম্মদপুরের বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলাকালে র‍্যাবের পাহারা। ২৯ এপ্রিল ২০১৯।
[মেঘ মনির/বেনারনিউজ]

ট্রাফিক পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলার প্রায় তিন মাস পরে এবার ঢাকায় পৃথক দুটি পুলিশ বক্সের কাছে বোমা পাওয়া গেছে।

গত মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর পল্টন ও খামারবাড়ি এলাকায় দুটি পুলিশ বক্সের কাছে এই বোমা উদ্ধারের পর সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে পুলিশের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দল।

আতঙ্ক ছড়াতেই কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোমা দুটি ফেলে যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ। দুটি বোমাই মাঝারি মানের শক্তিশালী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

“মঙ্গলবার রাতে উদ্ধার করা বোমা দুটির ধরন একই। চারদিকে দাহ্য পদার্থ যুক্ত বোমা দুটি শক্তির দিক দিয়ে মাঝারি মানের,” সাংবাদিকদের বলেন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগের বোমা উদ্ধার নিষ্ক্রিয়করণ দলের উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।

তাঁর মতে, “আতঙ্ক ছড়াতেই বোমা দুটি রাখা হয়েছিল।”

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, অতীতে যেসব জঙ্গি বড় ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে এসব তারই ধারাবাহিকতা। তবে ইতিমধ্যে তারা দুর্বল হয়েছে পড়ায় উদ্বিগ্ন না হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) এ কে মোহাম্মদ আলী সিকদার বেনারকে বলেন, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তবে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও কিছু নেই।

“এই জঙ্গিরা একসময় সারা দেশে টার্গেট কিলিং শুরু করেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় হলি আর্টিজানে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে,” বলেন তিনি।

“তখন এসব ঘটনার দায় আইএস ঘটিয়েছে বলে দাবি করত। সেটা আইএস হোক বা যারাই হোক, আমরা বুঝেছিলাম তাদের একটা শক্তি, সামর্থ্য, অর্থ আছে। কিছুদিন আগে পুলিশের উপর বোমা ছোঁড়ার ঘটনা সেই আইএস দাবি করেছে। অর্থাৎ এই গোষ্ঠীর শক্তি কমে গেছে,” বলছিলেন মোহাম্মদ আলী সিকদার।

“তবে রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছেন, জনগণের নিরাপত্তায় যারা আছেন; মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য বিষয়টি তারা যেন হালকা ভাবে না দেখে,” পরামর্শ এই নিরাপত্তা বিশ্লেষকের।

তিনি মনে করেন, “সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা এমন ছোট খাটো ঘটনায় সাধারণ মানুষ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া দেখে। তার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী অ্যাকশনে যায়।”

প্রসঙ্গত, গত ৩০ এপ্রিল গুলিস্তানে ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় দুই ট্রাফিক পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্য আহত হন।

এরপর ২৬ মে রাতে মালিবাগে এসবি (বিশেষ শাখা) অফিসের সামনে এসবির একটি পিকআপে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। আকস্মিক ওই বিস্ফোরণে আহত হন ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদা আক্তার (২৮)। এছাড়া লাল মিয়া (৫০) নামে একজন রিকশাচালকও ওই ঘটনায় আহত হন।

পরে দুটি ঘটনারই দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের নামে বার্তা দেওয়া হয়। তবে পুলিশ সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে। তাদের দাবি, দেশের কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

যেভাবে নিষ্ক্রিয় হয় বোমা দুটি

তেজগাঁও থানার পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত ১০ টার পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের খামারবাড়ি প্রান্তে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সের কাছে বোমা মতো বস্তু দেখা যায়।

এরপর ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তেজগাঁও থানার পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে নেয় এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম বিভাগের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা সেখানে কাজ শুরু করেন। রাত প্রায় তিনটার দিকে রোবটের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

ওই দিন রাত ১১ টার দিকে পল্টন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে একটি কাগজের বাক্স বা কার্টন দেখে এগিয়ে যান দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। ওই বাক্সের ভেতর তার প্যাঁচানো একটি বস্তু দেখে বোমা বলে ধারণা করেন তারা।

পরে পুলিশের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দলকে ডেকে সেটি বোমা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত একটার দিকে ওই বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে পুলিশ।

উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, দুটি বোমা থেকেই আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো কমপ্লিট আইডি কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিভাইসের ভেতরের উপকরণ পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।